ঢাকা: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংবিধানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটি পুনর্লিখন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর রমনার বিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্যে সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের পক্ষে আমি না। এটি সংশোধন কোনো কাজে আসবে না। এটি পুনর্লিখন ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে ‘ক’ ধারায় এমন কিছু জিনিস আনা হয়েছে যেটি সংশোধন করার কোনো উপায় নেই। সাংবিধানিকভাবে এক নায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভাবনীয় ক্ষমতা। নির্বাচনী সার্চ কমিটি অস্বচ্ছ ছিল। শেখ হাসিনা নিজের লোকদের কমিশনে বসিয়েছে।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক এই ধারাবাহিক সংলাপের প্রথম আয়োজনের বিষয় ছিল ‘সংবিধান’।
সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সিজিএস’র উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান অ্যাড. জেড আই খান পান্না, নিউ এজ’র সম্পাদক নূরুল কবির, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা)-এর সভাপতি মুনিরা খান, চাকমা সার্কেলের প্রধান ও আইনজীবী রাজা দেবাশীষ রায়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস’র নির্বাহী পরিচালক ড. মনজুর হাসান ওবিই, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান।
সংলাপে একজন আইনজীবী হিসেবে নিজের মতামত তুলে ধরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন— কোনটি হবে, সেটি আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক হবে। তবে যেটিই হোক, সেটা আমাদের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে নিয়ে যাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংবিধান প্রণয়নের পর সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করা হয়েছে। সংবিধান একটি জীবিত নথি। এর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি নিতে হয়।
তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন এই সরকারকে (অন্তর্বর্তী সরকার) সংবিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আমি বলব, সরকার সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকারী নয়। এই সরকার হচ্ছে ট্রাস্টি, সুবিধাভোগী হচ্ছে জনগণ এবং এই সরকারের বিশ্বাসের পেছনে রয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। সুতরাং, আমরাদের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে ছাত্র-জনতার কাছেই ফিরে যেতে হবে। আমরা যেন এটাকে একটি মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রিসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে বসি। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য।
১৯৭১ এর প্রেক্ষাপটে তৈরি করা সংবিধান দিয়ে এখনো চলা সম্ভব নয় বলে মনে করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান অ্যাড. জেড আই খান পান্না।
নিউ এজ’র সম্পাদক নূরুল কবির বলেন, ক্ষমতা কখনো অসীম ও অনির্দিষ্ট নয়। গণতান্ত্রিক দেশে একমাত্র সসীম ক্ষমতা জনগণের। কারণ এই সসীমতাকে জনগণ ছোট ও বড় করতে পারে। তাই সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধ করতে পারেন। কিন্তু সেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা লাগবে। তা না হলে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান হতে পারে না।
সুজন’র সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সংবিধান নতুন করে পুনর্লিখন করতে হবে নাকি সংশোধন করেই ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া যাবে? এই প্রশ্নের সুরাহা যদি আমরা করতে পারি তাহলে অন্য সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে। আমার মনে হয়, এই সিদ্ধান্তটা প্রাথমিকভাবে আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বর্তমান সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত থাকতে পারে, তবে আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং সফলতা নিশ্চিত করতে চাই। কারণ, তাদের ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, নতুন বাংলাদেশে আমাদের ওই জায়গায় পৌঁছাতে হবে, যেখানে আমাদের আগের যে রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে, সেগুলোকে কীভাবে পুনর্গঠন করব। এই পুর্নগঠনের ভিত্তির ওপরেই নির্ধারণ হবে, কীভাবে আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে নতুন নতুন জায়গা থেকে পুনর্নির্মাণ করব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের যে বৃহত্তর অংশ আছে, তারা আসলে কী চাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সংবিধানে যে মৌলিক মানবাধিকারের কথা রয়েছে, নতুন সংবিধান লিখলে সেগুলোতে খুব বেশি পার্থক্য হবে, তা কিন্তু না। আমি মনে করি, এটি একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। এটা শুধু রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়। এটি সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষের গল্প শুনে করতে হবে। জনগণ যে সংবিধানের ক্ষমতা জীবনের বিনিময়ে নিয়ে এলো, সেটার প্রতিফলন যদি সংবিধানে না থাকে, তাহলে সংবিধানের কয়েকটা অনুচ্ছেদ বদলে এটাকে আর লেখার দরকার নেই।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন