সিগারেট কোম্পানিগুলো উদ্দেশ্যমূল্যকভাবে পরিবেশ, রাজস্ব ও শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে। একইসঙ্গে তারা প্রতিবছর বাজেটের আগে সরকারের তামাক কর সংশ্লিষ্ট নীতিকে প্রভাবিত করার জন্য ভিত্তিহীন চোরাচালানের মিথ প্রচার করে। সারাদেশে পরিত্যক্ত অবস্থায় নকল সিগারেট আটকের খবর প্রচারের মাধ্যমে তামাক কোম্পানি সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি না করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চাপ প্রয়োগ করতে চায়।
অথচ তামাক কোম্পানির এ ধরনের প্রচারণার কোনো ভিত্তি নেই। বিপরীতে তামাক কর প্রস্তাবে ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দের সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে করছে তামাক কোম্পানি। পাশাপাশি তামাক খাতের রাজস্ব বৃদ্ধি ও কর ফাঁকি বন্ধে এবং কোম্পানির জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে তামাক কর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করা জরুরি।
আজ শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে ‘আইন বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির নানা হস্তক্ষেপ : গবেষণার ফল প্রকাশ ও আলোচনা সভা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উন্মোচিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অব সোসাইটি (ডাস্) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ‘এন ইনভেস্টিগেশন অব বাংলাদেশ’স বিজনেস-ফ্রেন্ডলি সিগারেট প্রাইসিং অ্যান্ড ওয়ে ফরয়ার্ড’, ‘ইনফ্লুয়েন্স অব টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি আন্ডারমাইন্স পাবলিক হেলথ ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘দ্য ইনভারোমেন্টাল হার্ম অব দ্য টোব্যাকো ফ্যাক্টরি ইন রেসিডেনশিয়াল এরিয়াস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক তিনটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিশেষত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের চলমান সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো হস্তক্ষেপ করেছে। এক্ষেত্রে তারা তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে একইসঙ্গে সরাসরি সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে গিয়ে আইন সংশোধনে হস্তক্ষেপ করেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকার এখনও কোনো নীতিমালা হালনাগাদ করেনি। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো ক্রমাগতভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও প্রমাণ থাকা সত্বেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানে ডাস্ এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নীতি বিশ্লেষক ফাহমিদা ইসলাম এবং মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক পলাশ চন্দ্র বণিক। এছাড়া অনুষ্ঠানে তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডাস্ এর টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল এবং সঞ্চালনা করেন ডাস্ এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু।
এসময় বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় বাধা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ। তামাক কোম্পানি যেহেতু এমআরপির চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে বিপুল অবৈধ মুনাফা অর্জন করে, সেহেতু তারা দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করে। কিন্তু সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সে পথ বন্ধ করা হলে তামাক কোম্পানিই মূল্য বৃদ্ধির কথা বলবে। বিপুল অবৈধ মুনাফা অর্জন বন্ধ করা হলে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির আগ্রাসী আচরণ, অবৈধ হস্তক্ষেপ, আইন লংঘন ইত্যাদি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তখন চোরাচালানের মিথ প্রচার করেও তারা আর সুবিধা করতে পারবে না। তবে এর জন্য অবশ্যই তামাক কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করতে হবে। এতে রাজস্ব ফাঁকি কমবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
বক্তারা আরও বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো ‘আইন সংশোধন হলে রাজস্ব কমে যাবে’ বলে ভয় দেখায়। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ এবং ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের সময়ও তারা একই ধরনের প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত ১০ বছরে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন প্রণয়নের ফলে তামাক ব্যবহারের হার কমলেও রাজস্ব আয় কখনোই পূর্বের বছরের তুলনায় কমেনি। ফলে সরকারকে অবশ্যই তামাক নিয়ন্ত্রণের খসড়াটি পাস করার পাশাপাশি একটি তামাক করনীতি প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে গবেষণায় তামাক নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে যেসব ফলাফল উঠে এসেছে সেগুলো গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন চিকিৎসক, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন