ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েক মাস ধরে জমাট বাঁধা উত্তেজনা এবার সামনে এসেছে। গত আগস্টে বাংলাদেশের এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে তার উপস্থিতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়িয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকারের আশঙ্কা, শেখ হাসিনা ভারতে বসেই ক্ষমতায় ফিরে আসার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ভারত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অতিরঞ্জিত করছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রামে হিন্দু পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার। একসময় ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) নামক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দুরা ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১০ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশের একটি আদালত তাকে ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইন অনুযায়ী বিচারপূর্ব কারাগারে পাঠিয়েছে।
চিন্ময়ের সমর্থকেরা রায়ের পর আদালত ঘিরে ধরলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নিরাপত্তা বাহিনী হিমশিম খায়। এসময় এক মুসলিম আইনজীবীকে হত্যা করা হয়। ওই আইনজীবীকে কারা হত্যা করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের তরফ থেকে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায়সংগত দাবি তুলে ধরার কারণে একজন ধর্মীয় নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার জন্য দায়ীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। তবে তার শাসনামলেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থাকে ভারত একটি আবেগপ্রবণ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যেন শেখ হাসিনা পতনের পরবর্তী গণআন্দোলনকে দুর্বল করা যায়।
ড. ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের দাবি, ভারত থেকে ধারাবাহিকভাবে অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে বেশ উত্তপ্ত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া ও সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকারকে চরমপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে প্রচার করাটা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তিনি কথা বলে যাচ্ছেন। এটি পুরো দেশের জন্য অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ভারত সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করছি, এটি ন্যায়সংগত নয়। আপনি এমন একজনকে জায়গা দিচ্ছেন, যাকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূস আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মতো একটি চরমপন্থী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে ভারত। তিনি বলেছেন, আপনারা যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন, তাহলে নিজেদেরও অস্থিতিশীল করবেন। কারণ, অস্থিতিশীলতার উপাদানগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে।
তবে বিশ্লেষকদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করে নিজেদের অবস্থান দুর্বল করেছে। এই আইনটি শেখ হাসিনার শাসনামলেও বিরোধীদের দমন করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন