অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম ও সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফ মাহমুদ অপুর বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৮২৬ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তার নিজ নামীয় ১৪টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫ কোটি ৯০ লাখ ১৫ হাজার ৫৯০ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফ মাহমুদ অপুর নামে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তৃতীয় মামলায় আসামি পুলিশের ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামের নিজ নামে ৯৪ লাখ ১ হাজার ৮০৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) (৩) ধারায় মামলা হয়েছে।
গত বছরের ৯ অক্টোবর ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুষ, অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান ও মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানের নামে পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
একই দিন কামালের এপিএস মনির হোসেনকে আসামি করেও একটি মামলা হয়। আসাদুজ্জামান খানকে চার মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ২১ আগস্ট কামালের পরিবার এবং তার সাবেক পিএস হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপুসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবের সব লেনদেনের তথ্য তলব করে দুদক। গত ১ সেপ্টেম্বর তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
বৃহস্পতিবার দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, দুদকের অনুসন্ধানে পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামের দুই কোটি ৭ লাখ ১ হাজার ৩১৩ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে ৯৪ লাখ ১ হাজার ৮০৭ টাকার।
কয়েক কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০১৩ সালে মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম দুদক অনুসন্ধান শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে অজ্ঞাত কারণে সেই অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার দুর্নীতির অনুসন্ধান পুনরায় শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোল্যা নজরুল ইসলামকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর গুলশান থানা এলাকার কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জুবায়েদকে হত্যাচেষ্টা মামলায় রাজশাহীর সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমি থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।