আজ সোমবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ‘পহেলা বৈশাখ’। পহেলা বৈশাখ অর্থই ‘পান্তা-ইলিশ’। তবে, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশ এখন বিলাসী খাবার। পান্তা জুটলেও মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের পাতে এখন ইলিশের দেখা মেলা ভার। উৎসব-পার্বণে ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেড়েছে ইলিশ বিক্রি। বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করতে নেমে পড়েছেন যথারীতি প্রতিযোগিতায়। ফলে পহেলা বৈশাখ ঘিরে এবারও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এমন চড়া দামে হতাশ হয়েছেন ক্রেতারা।
গতকাল রোববার পলাশী, নিউমার্কেট, নবাবগঞ্জ, শান্তিনগর, কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইচ্ছেমতো দাম হাঁকানো হচ্ছে ইলিশের। যত বড় ইলিশ, দামও তত বেশি। হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে দাবি করেন ক্রেতারা।
দেখা যায়, ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম উঠেছে মানভেদে ২২০০ থেকে ৩০০০ টাকা। মাঝারি আকৃতির ইলিশের কেজি ২৮০০-৩০০০ টাকার নিচে মিলছে না। সবচেয়ে বড় আকৃতির ইলিশ মাছ ৩৫০০-৩৭০০ টাকা দাম চাওয়া হয়েছে।
শান্তিনগর বাজারে ইলিশ কিনতে আসা লতা আহম্মেদ পুতুল হতাশার সুরে রূপালী বাংলাদেশকে জানান, পহেলা বৈশাখ ঘিরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশের দাম। হঠাৎ করেই মাছটির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি বছর এমন দৃশ্য দেখলেও এবার ভেবেছিলাম বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অথচ এবারও একই অবস্থা।
বাজার ঘুরে জানা যায়, টাটকা এক কেজি বা একটু বেশি ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩২০০-৩৫০০ টাকা। আর ৭০০-৯০০ গ্রামের ইলিশের দাম ২৫০০-২৮০০ টাকা। ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ১৫০০-১৮০০ টাকা।
ক্রেতা আবু সবুর উদ্দিন জানান, পহেলা বৈশাখে পান্তার সঙ্গে ইলিশ উচ্চবিত্তদের খাবার। তারা মাছ কিনছেন শখে। এই ইলিশ মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষের পাতে উঠছে না দামের কারণে। ইলিশের এই চড়া দামে ফিকে রংহীন আমাদের মতো মধ্যবিত্তের পান্তার থালা এবং বৈশাখ।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, জেলেদের জালে ইলিশ খুব কম ধরা পড়ছে। এজন্য দাম আগের তুলনায় একটু বেশি। এ ছাড়া এখন জাটকা সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট মাপের জাল ব্যবহার করছেন জেলেরা। সে কারণে ইলিশের দেখা মিলছে না। তবে ক্রেতারা ইলিশের বাড়তি দামের জন্য অসাধু চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইলিশের দাম বাড়াচ্ছেন।
নবাবগঞ্জে ইলিশ কিনতে আসা মাসুম বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদনও বাড়ছে ইলিশের। তবে বেশি দামের কারণে এই মাছের স্বাদ নিতে পারছি না আমরা। এই মাছ তো চাষ করতে হয় না, নেই উৎপাদন খরচও। তার পরও কয়েক বছর ধরে নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। দাম বাড়িয়ে বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই ইলিশকে উচ্চবিত্তের খাবারে পরিণত করেছেন। পহেলা বৈশাখ ঘিরে একটি মাছ কিনতে এসে দেখি দাম আকাশচুম্বী।’
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা জানান, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাজারে ইলিশের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। তবে বাজারে এখন যেসব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই হিমায়িত ইলিশ। সেগুলোর স্বাদ ও গন্ধ কম, দামও একটু কম। তবে টাটকা বা ফ্রেশ ইলিশের চাহিদা যেমন বেশি, দামও বেশি।
পান্তা-ইলিশ ‘বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়’: উপদেষ্টা ফরিদা
এ বছর পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। গত ৭ এপ্রিল সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এই আহ্বান জানান। তিনি চৈত্রসংক্রান্তি পালনের সঙ্গে পহেলা বৈশাখে বাতাসা, দই, চিড়া, মিষ্টি, ছাতুর শরবত, ভাত, শাক, সবজি ইত্যাদি খাওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘মানুষ পহেলা বৈশাখে ইলিশ খায় কেমন করে। এ সময় তো ইলিশ পাওয়ার কথা নয়। পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। এটি আমি পরিষ্কার করতে চাই।’
উল্লেখ্য, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ ইলিশ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে ৫ লাখ টনের বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন ৫ লাখ ৫০ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ৫ লাখ ৭১ হাজার টন।
 

 
                             
                                    
                                                                

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন