বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপটে ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ও করিডোরসহ সব সুবিধা বাতিল করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আজিজুল হক এ নোটিশ পাঠান।
একইসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব, অর্থসচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালযয়ের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র চেয়ারম্যানের দপ্তরে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পর সরকার যদি ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট, ট্রান্সপশিপমেন্ট সুবিধা, বৈষম্যমূলক চুক্তি বাতিলে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে উচ্চ প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হবে। তিনি বলেন, ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। এখন বাংলাদেশের জনগণও চায় ভারতকে দেওয়া সব সুবিধা বাতিল হোক।
ট্রান্সশিপমেন্টও এক ধরনের ট্রানজিট সুবিধা। এটি ট্রানজিট ব্যবস্থার মধ্য থেকেই বাড়তি এক ধরনের সুবিধা। ট্রানজিট সুবিধা নেওয়ার সময় পণ্যের চালানের জন্য যদি যানবাহন পরিবর্তন করা হয়, তাহলে একে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বলে। আর ট্রানজিটের আওতায় একটি দেশ বা একাধিক দেশ যে সুবিধা নেয়, একে অনেক সময় করিডর সুবিধা বলা হয়।
সাধারণত নানা অসুবিধার কারণে পণ্যের আসা-যাওয়া সহজ করতে যে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়, এটাকে করিডর সুবিধা বলে। আকস্মিকভাবে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত।
নোটিশে এই বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির অধীনে ২০২০ সাল থেকে ভারতের কাছ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পেয়ে আসছিল বাংলাদেশ। এই সুবিধা প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ আর ভারতের বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করতে পারবে না।
নিজস্ব উপায়ে অন্যান্য দেশে পণ্য পরিবহন করতে হবে। ভারতের এই পদক্ষেপ স্পষ্টতই বাংলাদেশের পণ্য ও পরিষেবার সহজ চলাচলকে সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ করেছে। শুধু তাই না, ভারতের ই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ ধরনের বৈরী আচরণের মধ্য দিয়ে ভারত আইন লঙ্ঘন করেছে।’
বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারত ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও করিডোর সুবিধা নিচ্ছে উল্লেখ করে নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড)সহ ভারতের জন্য বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, এমনকি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) বাংরাদেশে রয়েছে।
শুধু তাই না, বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় টিভি চ্যানেল রয়েছে, যার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার পাশাপাশি বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে।
এ ধরনের বিশাল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও কেবল ক্ষোভ মেটাতে এবং বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করতে হঠাৎ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। এটি একটি জঘন্য সিদ্ধান্ত। এই কাজ করে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করেছে।’
দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের স্বার্থে নোটিশটি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, “জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, ভারতের আধিপত্য থেকে দেশ, জনগণ ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা।
তিনি বলেন, “ভারতের অযৌক্তিক ও ঔপনিবেশিক স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। যদি তা না করা হয়, তাহলে নিশ্চিত যে ভারত অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশবিরোধী আরও পদক্ষেপ নেবে।
তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত জনগণের স্বার্থে ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও করিডোরসহ সব সুবিধা বাতিল বা প্রত্যার করা।” নোটশি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আইনি ব্যবস্থা হিসেবে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানান তিনি।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন