পদ্মা নদীতে সম্প্রতি একটি ওয়াটারস্পাউট বা জলস্তম্ভ উৎপত্তি হয়। ওই ওয়াটারস্পাউটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সবত্র হইচই পড়েছে। এটিকে অনেকে ‘টর্নেডো’ হিসেবেও আখ্যায়িত করছেন।
তবে আবহওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে কখনোই টর্নেডো ‘হয় না’। ওয়াটারস্পাউট উৎপন্ন হয়। যদিও ওয়াটারস্পাউট আর টর্নেডোর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। মূলত জলভাগে ঘটলে ওয়াটারস্পাউট আর স্থলভাগে ঘটলে টর্নেডো বলা হয়।
গত ২৯ এপ্রিল দুপুর তিনটার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে হাটখোলা এলাকায় পদ্মা নদীতে ওই ঘটনা ঘটেছিল।
ওই সময় হঠাৎই পদ্মার পানি আকাশের দিকে উঠে যায়। তৈরি হয় বিশাল একটি জলীয় স্তম্ভ। অনেকটা ফানেলের মত রূপ ধরণ করে। তবে ধীরে ধীরে সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘পদ্মা নদীতে যেটি ঘটেছে সেটির ভিডিও চিত্র দেখেছি। এটিকে টর্নেডো বলা যাবে না।
এটিকে আমরা ওয়াটারস্পাউট (জলস্তম্ভ) বলি। এটি জলভাগেই ঘটে। তবে একই ঘটনা স্থলভাগে ঘটলে তখন টর্নেডো বলা হয়। দুটি ঘটনার বৈশিষ্ট্য একই রকমই। তবে স্থলে না উঠলে সেটি ওয়াটারস্পাউট হিসেবেই ধরা হয়।’
ওয়াটারস্পাউট বা জলস্তম্ভ কী?
বাংলাদেশে এখনও টর্নেডো উৎপন্ন হওয়ার রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সময় ওয়াটারস্পাউট বা জলস্তম্ভ উৎপত্তি হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
কুষ্টিয়ার আগে ২০২২ সালে মৌলভীবাজারের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওড় হাকালুকিতে একটি ওয়াটারস্পাউট হয়েছিল। এমন ঘটনা এরআগেও সেখানে ঘটেছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

ওয়াটারস্পাউট (জলস্তম্ভ) দুই ধরণের হয়ে থাকে। যার একটি অনুকূল আবহাওয়ায় (ফেয়ার ওয়েদার) ঘটে। অন্যটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘটে। এই ওয়াটারস্পাউট একই স্থানে একই সময়েও একাধিকও ঘটে।
যেমন ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান হ্রদে একই সময়ে নয়টি ওয়াটারস্পাউট ঘটেছিল। আবার অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে ২০২১ সালের মে মাসে একই সঙ্গে কমপক্ষে পাঁচ ওয়াটারস্পাউট ঘটেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াটারস্পাউট (জলস্তম্ভ) দুই ধরণের হয়ে থাকে। যার একটি অনুকূল আবহাওয়া বা শান্ত পরিস্থিতিতে (ফেয়ার ওয়েদার) ঘটে।
অন্যটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘটে, যেটিকে ‘টর্নেডিক ওয়াটারস্পাউট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যেটি ঘটেছে সেটি ফেয়ার ওয়েদারে ঘটে। এমনটি সাধারণত দুর্বল হয়।
তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শক্তিশালী ওয়াটারস্পাউট হয়। বিশেষ করে যখন আকাশে ঘন মেঘ থাকে। তখন সেটির সঙ্গে ঠান্ডারস্টর্মের (বজ্রপাত) সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে। তখন সেটি খুবই বিপজ্জনক হয়।’
ওয়াটারস্পাউট কতটা আশঙ্কার?
তবে সম্প্রতি পদ্মানদীতে যে ওয়াটারস্পাউট উৎপন্ন হয়েছে, সেটি ফেয়ার ওয়েদারেই ঘটেছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
তবে এমনটি দুর্বল হলেও বিপদ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তাছাড়া টর্নেডিক ওয়াটারস্পাউটও ঘটতে পারে বলেও আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা।
জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর বলেন, আমাদের এখানে দুই ধরণের ওয়াটারস্পাউটই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

‘ধরুন সেদিন যেটি ঘটেছিল তখন সেখানে নৌকা বা ট্রলার থাকলে বিপদে পড়ত। আবার এটি রাতেও ঘটতে পারে। তখন সেখান দিয়ে কোন নৌযান গেলে দুর্ঘটনার কবলে পড়বে। আর টর্নেডিক ওয়াটারস্পাউট হলে আর সেখানে নৌযান থাকলে বড় বিপদ নিয়ে আসবে।’
বিপদজনক টর্নেডিক ওয়াটারস্পাউটের আশঙ্কা থাকলেও আবহাওয়া অফিসের সরাসরি কোন পূর্ভাবাস নেই। তবে পরোক্ষভাবে পূর্ভাবাস দেওয়া হয় বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর বলেন, ‘টর্নেডিক ওয়াটার স্পাউট ঠান্ডারস্টর্মের (বজ্রপাত) সঙ্গে কানেকশান তৈরি হয়। এমনটা খুবই বিপজ্জনক হয়ে থাকে। তেমন পরিস্থিতিতে ঠান্ডারস্টর্ম (বজ্রপাত) নিয়ে আমাদের বিশেষ পূর্ভাবাস থাকে। জড় বৃষ্টির পূর্ভাবাসেও এই বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়।’