সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে ১৬৬ সুপারিশের অধিকাংশে রাজনৈতিক দলগুলো একমত বা আংশিক একমত হয়েছে। আনুপাতিক উচ্চকক্ষ ও এনসিসি গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসের যেসব সুপারিশকে মৌলিক সংস্কার বলা হচ্ছে, সেগুলোতে প্রধান প্রধান দল পুরোপুরি বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।
দেশের একটি গণমাধ্যমকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে। প্রথম ধাপের সংলাপে ৩৩টি দল ও জোট আন্তরিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছে; নিজেদের মতামত জানিয়েছে। যেসব মৌলিক জায়গায় ভিন্নমত রয়েছে, সেগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে দলগুলোকে ছাড় দিতে হবে।
সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে বাকি কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। এর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ স্বতন্ত্র আইনের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ীই নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এই একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, উচ্চ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার, বিরোধী দল থেকে উচ্চ ও নিম্নকক্ষে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার বাইরে দল থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নিয়ে ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। একই সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও।
সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে। এনসিসির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান এবং তিন বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ করা হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও নিয়োগ হবে এনসিসির মাধ্যমে। এতে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমে যাবে– এমন যুক্তিতে এনসিসি গঠনে রাজি নয় বিএনপি।
বিএনপির ভাষ্যমতে, সুপারিশ অনুযায়ী সংসদ বিলুপ্তির সময়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে এনসিসি কার্যকর থাকলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ঝুঁকি রয়েছে। এটি রাষ্ট্রকে অনিশ্চয়তায় ফেলবে।
সংস্কার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত বিএনপি নেতারা বলেন, এনসিসি গঠনের বিষয়ে তারা কিছুতেই সম্মতি দেবেন না।
জামায়াতে ইসলামীর মতে, এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতি থাকতে পারবেন না। সংসদ বিলুপ্তির সঙ্গে এনসিসিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিও এনসিসি চায়। তবে এ দলটির প্রস্তাব, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এনসিসির মাধ্যমে হলেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ সরকারই দেবে।
এদিকে, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘ইলেকট্রোরাল কলেজ’-এ রূপান্তরের সুপারিশে একমত নয় বিএনপি ও জামায়াত। তবে এতে সমর্থন জানিয়েছে এনসিপি। জেলা সমন্বয় পরিষদে বিএনপির আপত্তি থাকলেও দলটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলের জেলা উন্নয়ন পরিষদ চায়। শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি দিলেও উন্নয়ন পরিষদে এমপিদের চায় বিএনপি।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কোনো আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে সেই ব্যক্তি রাজনীতি এবং নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়েছে।
সুপারিশ অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে তারা দণ্ডিত হওয়ার আগেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। তবে এ সুপারিশে একমত নয় বিএনপি। এনসিপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। জামায়াত কমিশনের সুপারিশে একমত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :