গুমের মামলার ৬৭ শতাংশেরও বেশি ঘটনার সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সিটিটিসি জড়িত। গুমের বেশিরভাগ ঘটনাই আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি পদ্ধতিগত চর্চার অংশ। গুম সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (৪ জুন) গুম কমিশন তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, গুম সংক্রান্ত কমিশন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৮৩৭টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৭২টি অভিযোগকে সক্রিয় মামলা হিসেবে কমিশনের ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সক্রিয় মামলাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৪২৭ জন ভুক্তভোগী জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন, আর ৩৪৫ জন এখনো নিখোঁজ। শতাংশের হিসাবে জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছে ৮১ শতাংশ এবং এখনো নিখোঁজ ১৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয় , পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সিটিটিসির যৌথ অভিযানগুলো হিসাব করলে এই অনুপাত আরও বেড়ে যায়, যা তাদের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। বহুক্ষেত্রে একাধিক রাষ্ট্রীয় সংস্থার যৌথ অভিযান জড়িত থাকায় তদারকি ও জবাবদিহি উভয়ই জটিল হয়ে পড়ে।
বিশেষায়িত ও গোয়েন্দাভিত্তিক সংস্থাগুলো- যেমন ডিজিএফআই ও এনএসআইকে প্রাথমিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করতে দেখা যায়, যা সমন্বিত অভিযানের ইঙ্গিত দেয়। বিজিবি ও এনএসআইয়ের মতো সংস্থা কম পরিমাণে উল্লেখ থাকলেও, অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে একত্রে তাদের বারবার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
এতে বলা হয়, সংখ্যায় কম হলেও তাদের উপস্থিতি মাঝে মাঝে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। উপাত্তে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আধিপত্য প্রমাণ করে যে এসব ঘটনায় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা কিংবা সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
এনএসআই ও বিজিবির মতো সংস্থার তুলনামূলক কম উপস্থিতি হয়তো তাদের সীমিত ভূমিকা অথবা এসব বিষয়ে অভিযোগের কম তথ্যপ্রবাহের ফল হতে পারে।
পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি যারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন, তাদের উপস্থিতি গোপন অভিযান পরিচালিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়, যা জবাবদিহি ও দায় নির্ধারণে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।