জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ শুনানি শুরু করে। শুনানি সরাসরি বিটিভিতে সম্প্রচার করা হচ্ছে।
আসামিদের মধ্যে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী আমির হোসেন তাদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে জাতীয় দুটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। ২৪ জুন ছিল সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাত দিনের সময়সীমার শেষ দিন। তারা হাজির না হওয়ায়, বিচারিক কার্যক্রম অনুপস্থিতিতেই চালানোর অনুমতি দেন আদালত।
গত ১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ও গণহত্যা সংগঠনের নির্দেশ ও পরিকল্পনার অভিযোগ।
গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ওই গণহত্যার প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ জনগণ ও ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়, যাতে প্রাণ হারায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ট্রাইব্যুনালে আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ পড়ে শোনান।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অভিযোগপত্র ও তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিচার শুরুর মতো প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশজুড়ে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বহু মানুষ। ওই সময় বিরোধী দলগুলো এই হত্যাকাণ্ডকে ‘রাষ্ট্রীয় গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে। মামলা তদন্তের পর দায়ী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও আইজিপি মামুনের নাম আসে।