ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

পাইলট তৌকিরের শেষ বার্তা: বিমান ভাসছে না, নিচে পড়ছে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ১২:৩১ এএম
পাইলট তৌকির ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানের পরিস্থিতি জানান দিচ্ছিলেন। মৃত্যুর আগমুহূর্তেও তিনি বলেছিলেন, বিমান ভাসছে না... মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর সোয়া ১টার দিকে কুর্মিটোলা পুরাতন বিমানঘাঁটি থেকে একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রথমবারের মতো একক উড্ডয়ন (সলো ফ্লাইট) করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। প্রশিক্ষণের এ ধাপটি বৈমানিকের দক্ষতার সবচেয়ে চূড়ান্ত ও জটিল ধাপ হিসেবে বিবেচিত।

উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরা এলাকা অতিক্রম করে। এ সময় হঠাৎ করে বিমানটির নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়। কন্ট্রোল রুমে বার্তা পাঠিয়ে তৌকির বলেন, বিমান ভাসছে না... মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।

তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোল রুম থেকে তাকে বিমান থেকে ইজেক্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে পাইলট তৌকির বিমানটি জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটের ব্যবধানে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ছাদে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একাধিক সাবেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সলো ফ্লাইটের জন্য পাইলটকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়। সাধারণত এ ধরনের ফ্লাইট শহরের আকাশেই পরিচালিত হয়ে থাকে, যদিও প্রশিক্ষণ ফ্লাইটগুলো সচরাচর জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে হয়।

তাদের মতে, পাইলট তৌকির ইসলাম ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল এবং সাহসী বৈমানিক, যিনি শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে অটল ছিলেন।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমানবাহিনী। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও স্কুল বন্ধ থাকায় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। তার এই আত্মত্যাগ দেশের তরুণ বৈমানিকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন সামরিক কর্মকর্তারা।