জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানিয়ে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পিউর-ডব্লিউপি (ডব্লিউপি) এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা ও সংশোধনী দ্রুত বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবসর ভবনে আয়োজিত সভায় ডব্লিউপি’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর জেবা আফরোজা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর নির্দেশনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো,
-
অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় সকল প্রকার পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তকরণ,
-
তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধে বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধকরণ,
-
তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ,
-
ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ,
-
তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধকরণ,
-
সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশকরণ।
ডা. মো. সারোয়ার বারী, সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, “২০০৩ সালে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক চুক্তি ডব্লিউএইচও এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী বিশ্বের অন্যতম প্রথম দেশ। ২০০৫ সালে এফসিটিসির বাধ্যবাধকতায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ খসড়া পরিমার্জনের জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। ১৩ জুলাই ২০২৫ ওই কমিটি তামাক কোম্পানির সঙ্গে বসে তাদের মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় যা ডব্লিউএইচও এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ, আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বা নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানি বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের কোনো অংশগ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়।”
বিশেষ অতিথি, এনএসইউ গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিশাদ চৌধুরী রবিন বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে জনস্বাস্থ্যের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে, তামাক কোম্পানির স্বার্থ নয়। সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়ার জন্য কোনো পরামর্শ সভা আয়োজিত হওয়া উচিত নয়। জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সভায় বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সচিব (অব:) মোহাম্মদ আলী স্বাগত বক্তব্য দেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনডিসির সদস্য মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্ত সচিব (অব:) ডা. মো. সুরাতুজ্জামান, মো. ইসমাইল হোসেন, অধ্যাপক সামসাদ বেগম প্রমুখ। তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানান এবং বলেন, “জনস্বাস্থ্যের জন্য এই সংশোধনী গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
সভা শেষে সদস্যরা স্বাক্ষর করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, “দেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ তামাক-সংক্রান্ত রোগে মারা যাচ্ছেন, বছরে প্রায় চার লাখ মানুষ পঙ্গুত্বগ্রস্থ হচ্ছেন, আর ৪২.৭ শতাংশ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশোধনী দ্রুত পাশ করা বাধ্যতামূলক।”
তারা আরও উল্লেখ করেন, “আগামী প্রজন্মকে তামাকের করালগ্রাস থেকে রক্ষা করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের এই সংশোধনী দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, নয়তো স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাবে।”
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন