সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান, নিজনি নভোগরদ, রাশিয়া থেকে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৩:০০ এএম

‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি’

তরুণদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন সম্ভাবনা ও সাফল্যের মঞ্চ 

শাওন সোলায়মান, নিজনি নভোগরদ, রাশিয়া থেকে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৩:০০ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কোনো মানুষকে তার শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সর্বত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়; বিভিন্ন সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে সাফল্যের পথে এগোতে হয় তাকে। তবে রাশিয়ার ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি ২০২৫’ এমন এক আয়োজন, যেখানে সম্ভাবনা আর সফলতা অর্জনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। আর তাই বিশ্বের ১২০টি দেশের প্রায় ২ হাজার যুব প্রতিনিধি এই আসরে খুঁজে নিচ্ছেন নানান সম্ভাবনা; হচ্ছেন সফল।

দেশটির নিজনি নভোগরদ শহরে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’-এ রাশিয়ার ১ হাজার যুব প্রতিনিধির সঙ্গে বিশ্বের ১২০টি দেশের ২ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। মিডিয়া, সৃজনশীল ইন্ডাস্ট্রি, জনপ্রশাসন, উদ্যোক্তা, ক্রীড়া, শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং ডিজিটালাইজেশন ও আইটি এই সাত ক্যাটাগরিতে ২ হাজার প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরেট। পাশাপাশি বিশ্বের অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নিচ্ছেন এই আয়োজনের খবর সংগ্রহে। এ ছাড়া ২০০ শিশু প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়ার ২০০ জন এবং ৩৯টি দেশের ৬০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীও থাকছেন এবারের আসরে। এসব পেশাজীবী তরুণেদের সঙ্গে ৮৬টিরও বেশি সেমিনার, সম্মেলন ও অধিবেশনে অংশ নেবেন। অংশগ্রহণকারী সবার খরচ বহন করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

অংশগ্রহণকারী যুব প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এই আয়োজন কোনো প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসর নয়। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। কেউবা আবার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে নেটওয়ার্কিং স্থাপন করছে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সংগীত, নৃত্য ও ক্রীড়ার মতো বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা আবার ছুটছেন ‘ফান্ডিং’ (বিনিয়োগ ও অর্থায়ন) পাওয়া যাবে এমন সব অধিবেশনে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিনিয়োগকারীরা অংশ নিচ্ছেন ফেস্টিভ্যালে।

তরুণ-তরুণীরা নিজেদের কমিউনিটিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বলছেন, এ ধরনের আয়োজন থেকে তৈরি দীর্ঘমেয়াদি যোগাযোগ এবং পরস্পর সহযোগিতা ও সমন্বয় তাদের সাহায্য করবে। ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালে অর্জিত অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে নিজ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চান তারা।
 
কেনিয়া থেকে ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়া তরুণ কারান কাটেইনা বলেন, ‘কেনিয়ায় একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা আমি যেখানে তরুণদের নিয়ে কাজ করি, রাশিয়ায় এসে দেখলাম কীভাবে তারা তাদের সাংস্কৃতিক মৌলিকতা অক্ষুণ্ন রেখেই নতুন প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করছে। এই অভিজ্ঞতা কেনিয়ার তরুণদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।’

তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদ থেকে ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী আনা গুল। ফেস্টিভ্যালের একটি ওয়ার্কশপ থেকে পাওয়া নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই তরুণী বলেন, ‘মস্তিষ্ককে কীভাবে কোন কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হয়, কাজে কীভাবে অনুপ্রেরণা আনা যায়; সে-বিষয়ক একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিই।’

ফেস্টিভ্যালে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করছেন তরুণী জয়নব আখতার। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, পুরো বিশ্ব জানে যে, ফিলিস্তিনে কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমাদের দিন পার করতে হয়। আমাদের জন্য ফিলিস্তিনের বাইরে বিশ্ব দেখার সুযোগ খুবই কম। তার মাঝে দেখতে চেয়েছিলাম যে, একা বিদেশ সফর করতে এবং এখানে আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি কি না। সেই আগ্রহ থেকেই ফেস্টিভ্যালে নিবন্ধন করি এবং আয়োজকদের আমন্ত্রণে চলে আস 

ফেস্টিভ্যালে এক টুকরো বাংলাদেশ

ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এ রয়েছে এক টুকরো বাংলাদেশও। ১০ জন যুব প্রতিনিধির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ বক্তা, পেশাজীবীসহ ১৯ জন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবারের অ্যাসেম্বলিতে। বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার শরিফা আলম জুঁই বলেন, ‘নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগের উদ্দেশ্য থেকেই ফেস্টিভ্যালে এসেছি। কয়েক দিনের নানান কার্যক্রমে সেই উদ্দেশ্যের অনেকখানি অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে করছি। রাশিয়া সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় জানার সুযোগ হয়েছে। রাশিয়ার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধশালী বলে জানতাম, আর এবার সেই সংস্কৃতির সরাসরি অভিজ্ঞতা নিচ্ছি। এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। এটা আমার ব্যবসায় সাহায্য করবে বলে প্রত্যাশা করি।’

স্টার্টআপ চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আরাফাতুল ইসলাম আকিব বলেন, ‘বিগত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের স্টার্টআপ এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা ধরে বিশ্বদরবারে প্রতিনিধিত্ব করাই আমার উদ্দেশ্য। যেমন এবারের আসরে বাংলাদেশকে ১২০টি দেশের কাছে পরিচিত করছি, দেশকে তুলে ধরতে পারছি। তাদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলছি। আমাদের যে যুবশক্তি আছে, সেগুলো জানাচ্ছি। আমাদের সক্ষমতা ও প্রতিভার জায়গাগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিত করছি। বিশ্বদরবারকে বাংলাদেশ ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

মিডিয়া শ্রেণিতে ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তরুণ সাংবাদিক হোসেইন সাগর। ফেস্টিভ্যালে ঠিক কী ধরনের কার্যক্রম হয়, সে বিষয়টি তুলে ধরে সাগর বলেন, ‘ফেলোশিপের মতো আয়োজনে সাধারণত ক্লাস এবং খুব গুরুগম্ভীর ওয়ার্কশপ হয়। তবে এ ধরনের ফেস্টিভ্যালে মূল আকর্ষণ থাকে নেটওয়ার্কিং অর্থাৎ, পরিচিয় ও যোগাযোগ স্থাপন এবং সেটিকে ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখা। ১২০ দেশের ২ হাজার প্রতিনিধি এখানে অংশ নিচ্ছেন। এই যে আমি তাদের সঙ্গে ঘুরছি, ফিরছি, কথা বলছি, অভিজ্ঞতা বিনিময় করছি; বিষয়টি এ ধরনের আয়োজনে অনন্য বিষয়। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সবার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ হচ্ছে।’

আয়োজনের সাফল্য কামনা করে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরেটের এশিয়া ও আফ্রিকা দেশগুলোর প্রস্তুতিবিষয়ক বিভাগের মুখ্য উপদেষ্টা আমিনা কুভেইভা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘যুব প্রতিনিধিরা যেন রাশিয়ায় তাদের জন্য একটি সম্ভাবনা পায়, সেই উদ্দেশ্য থেকেই এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজন। বিভিন্ন দেশের প্রতিভাবান তরুণদের জন্য রাশিয়ার দরজা খোলা। বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে এই সুযোগ বিনিময় করতে চায় রাশিয়া। সবাই কোনো না কোনো নতুন আইডিয়া পাবে, নতুন সুযোগ পাবে এখানে; যা প্রতিনিধিরা তাদের সমাজে, তাদের দেশে প্রয়োগ করবে। প্রতিনিধিরা নিজ দেশে ফিরে রাশিয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে অন্যদের জানাবে। এটাই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।’

বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের প্রতিভার বিষয়টি তুলে ধরে আমিনা আরও বলেন, ‘রাশিয়ায় জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের নানান আয়োজনে প্রতি বছর বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা অংশ নিচ্ছেন। যেহেতু আমি আফ্রিকার পাশাপাশি এশিয়া বিষয়েও দেখভাল করি, তাই তাদের খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক প্রতিভা ও সৃজনশীলতা রয়েছে। ভবিষ্যতেও রাশিয়ায় বিভিন্ন আয়োজনে তাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করি। আর সেগুলোর অভিজ্ঞতা তাদের কমিউনিটিতে অবদান রাখবে বলে আশা করছি।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!