সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৩:৩৬ এএম

জালিয়াতিতে কোটিপতি পাসপোর্টের বিমল কৃষ্ণ  

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৩:৩৬ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জাল-জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পাসপোর্টের কক্সবাজারের আঞ্চলিক অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট বিমল কৃষ্ণ হালদার। নামে-বেনামে ঢাকা ও খুলনায় করেছেন বাড়ি-গাড়ি। এ ছাড়া দেশের বাইরেও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিমল কৃষ্ণ হালদারের বিরুদ্ধে ১২০০ পাসপোর্ট পুলিশ রিপোর্ট ছাড়া ক্লিয়ার করেন। যার বিপরীতে আবেদনকারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত ২২ কোটি টাকা। বিভিন্ন অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (গোপনীয়) মোছা: তাজমা খাতুন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বরখাস্ত করা হয়। 

সূত্র জানায়, বিমল কৃষ্ণ হালদার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকার উত্তরার পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অনৈতিক ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ৮টি এনরোলমেন্ট আইডি নম্বর বেসিক ক্লিয়ারেন্স মডিউল থেকে অবমুক্তকরণের ক্ষেত্রে স্বীয় ইউজার আইডি ব্যবহার করে সরকারি বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেছেন। পাসপোর্টের এনরোলমেন্ট বলতে সাধারণত অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য (যেমন- ছবি, আঙুলের ছাপ, স্বাক্ষর) প্রদানের প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়, যা একটি ই-পাসপোর্ট তৈরির অপরিহার্য ধাপ। বিমল কৃষ্ণ নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভের জন্য এ ধরনের জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বেসিক ক্লিয়ারেন্স মডিউল থেকে পাসপোর্টগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিপত্রের নির্দেশনা অমান্য করে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা করেছেন। 

সূত্র জানায়, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে কর্মরত বিমল কৃষ্ণ ঢাকা, খুলনা ও কক্সবাজারে চাকরি করার সময় জাল-জালিয়াতি করে পাসপোর্ট গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এসব জায়গায় তার নামে-বেনামে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও প্লট এবং বাড়ি। 

জানা গেছে, রাজধানীর আদাবরের জাপান গার্ডেন সিটিতে তার দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে একটি প্লট রয়েছে। খুলনার পাসপোর্ট অফিসে চাকরির সময় দুর্নীতি করে সেখানে কিনেছেন বাড়ি। কক্সবাজারে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট থাকার সময় তার বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। 


 
অপর একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট বিমল কৃষ্ণ হালদার সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম দোসর। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরিতে অবৈধভাবে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিমলের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮-এর ৩(খ) ও (ঘ) বিধি মতে ২০২৩ সালে একটি বিভাগীয় মামলা হয়। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগের বিবরণী বিমল কৃষ্ণ হালদারের কাছে পাঠায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এরপর তিনি অভিযোগের বিষয়ে লিখিত জবাব দেন এবং ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণের দাবি জানান। বিমল কৃষ্ণ হালদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিমলের বক্তব্য ও অভিযোগের জবাব সন্তোষজনক হয়নি। পরবর্তী সময়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৭(২)(ঘ) অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগে থাকা ৮টি আইডি ছাড়া আরও ২৭টি এনরোলমেন্ট আইডি নিজের ইউজার আইডি ব্যবহার করে বেসিক ক্লিয়ারেন্স মডিউল থেকে অবমুক্ত করেছেন। যা বিধিবহির্ভূত ও সরকারি বিধি-বিধান লঙ্ঘন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নথিপত্র পর্যালোচনা ও তদন্ত প্রতিবেদনের মতামতের ভিত্তিতে বিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমোতাবেক তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। পাশাপাশি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর অভিযুক্ত বিমল নোটিশের লিখিত জবাব দাখিল করেন। তবে সার্বিকভাবে পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।  

অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (গোপনীয়) মোছা তাজমা খাতুন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই বরখাস্ত করা হয়।

আদেশে বলা হয়, বিমল কৃষ্ণ হালদার, সুপারিনটেনডেন্ট, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কক্সবাজার তার বিরুদ্ধে আনীত সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ (খ) বিধি মতে ‘অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার ৪(৩)ঘ বিধি মোতাবেক ‘চাকরি থেকে বরখাস্ত’ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। 

এদিকে, জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাৎ এবং নামে-বেনামে ঢাকা, খুলনায় বাড়ি-গাড়ির বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিমল কৃষ্ণ হালদারের মোবাইলে বারবার ফোন ও এসএমএস করেও কোনো সাড়া মেলেনি। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!