আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত, পলাতক ও পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির মোকাবিলা দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।
আইজিপি বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা দেশত্যাগ করেছে বা পলাতক আছে, তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমাদের সক্ষমতা যথেষ্ট।’
কোন পক্ষকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আমি কোনো নির্দিষ্ট শক্তির নাম উল্লেখ করতে পারব না। কিন্তু যারা পরাজিত ও ফ্যাসিস্ট, তাদের কার্যক্রম আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পুলিশ থানা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বর্তমান অবস্থায় ফেরা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।’
বাহারুল আলম বলেন, ‘বিশেষভাবে মোহাম্মদপুর এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বেসামরিক প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, অনেকের গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে, তাই কিছু ক্ষেত্রে নিবর্তনমূলক আটক আদেশ দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৩৫০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এ বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, কিছু অস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী, পাহাড়ি এলাকা বা আরসার হাতে পৌঁছাতে পারে। তবে পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে।’
নির্বাচনের জন্য পুলিশের প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘আমরা ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এটি দেশের ইতিহাসে এক বৃহৎ প্রশিক্ষণ উদ্যোগ। তাদের ভোটিং প্রক্রিয়া, নির্বাচন কেন্দ্রের বিধিবিধান এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়গুলো হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে। নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়ার আগে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের যোগ্যতা যাচাই করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ তিন ধাপে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২২০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আগামী ৫ অক্টোবর থেকে দেশের ১৩০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একযোগে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশকে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ চলাকালে অডিও-ভিজ্যুয়াল মডিউল ব্যবহার করা হবে এবং অস্ত্রের নীতিমালা মেনে নিরাপদভাবে ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’
আইজিপি উল্লেখ করেন, থানা থেকে লুট হওয়া কিছু ব্যক্তিগত অস্ত্র আছে, তবে পুলিশের অস্ত্র যথেষ্ট এবং সরকার সব বৈধ অস্ত্রকে সংগ্রহ করেছে। যারা অস্ত্র জমা দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং চেষ্টা চলছে সব অস্ত্র উদ্ধার করার।
নির্বাচনে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হচ্ছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমরা প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করেছি। সব বিধিমালা মেনে এবং কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করার জন্য পুলিশ পূর্ণ সক্ষম এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।