ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে ৭ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি- সংগৃহীত

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘গণহত্যা শুরুর আট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা এখনো শেষ হয়নি। সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি সহায়তা তহবিলও ভয়াবহভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই সংকটের উৎস মিয়ানমারে, তাই সমাধানও সেখানেই নিহিত।’

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর অবিলম্বে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং রাখাইনে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোই এই সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান। এটি মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের সঙ্গে জড়ানো উচিত নয়। সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ার কারণে একমাত্র বিকল্প হলো দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সবসময়ই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাই সাম্প্রতিক সময়ে যারা সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরও অবিলম্বে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’

বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য আর দেরি করা যাবে না। এখনই সময়, আমরা সবাই মিলে সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সাত দফা প্রস্তাবে উল্লেখ করেন:

১. রাখাইনে যুক্তিসংগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।

২. মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে সহিংসতা বন্ধ করা এবং নতুন আসা শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু।

৩. রাখাইনে স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করা এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

৪. রাখাইন সমাজ ও প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের টেকসই সংহতকরণের জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপে সহায়তা।

৫. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য দাতাদের আর্থিক সহায়তা একত্রিত করা।

৬. জবাবদিহিতা ও পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়ের নিশ্চয়তা।

৭. মাদক সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে একই সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।