ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি- সংগৃহীত

৬ দফা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদ জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি না করলে তারা শনিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনির্দিষ্টকালের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুরুল হক হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন প্রধান সমন্বয়ক ওয়াসি উদ্দিন রানা। উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী, মুখ্য সংগঠক জিয়াউল হক কাবুল, আব্দুস সালামসহ অন্য নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ওয়াসি উদ্দিন রানা, সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী, মুখ্য সংগঠক জিয়াউল হক কাবুল, আব্দুস সালামসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতা।

নেতারা জানান, বছরের পর বছর পেশাগত উন্নয়ন, পদোন্নতি কাঠামো এবং বেতন গ্রেড সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন জানাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ যুক্তিসংগত বলে স্বীকার করলেও পাঁচবার আশ্বাস দেওয়ার পরও কোনো দাবিই বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয়নি। এর ফলে মাঠপর্যায়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমছে বলে জানান তারা।

নেতাদের ভাষায়, “আমরা সবসময় দায়িত্ব পালন করেছি, কাজ বন্ধ করিনি। অথচ আমাদের দাবি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে। এবার আর শুধু কথা নয়—আমরা প্রয়োজনে দীর্ঘ আন্দোলনে যাব।”

দাবি পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন গত ১ অক্টোবর থেকে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতিতে যায়। এতে দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ টিকা কেন্দ্রে সম্প্রসারিত টিকাদান কার্যক্রম (ইপিআই) ও টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরিসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে দেশের তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রায় ৬ দিন স্থবির হয়ে পড়ে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরে আসে।

পরবর্তীতে ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বাস্থ্য সহকারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে এক মাসের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।

নেতারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকারের দেওয়া আশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কর্মবিরতি উঠিয়ে তারা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে টিসিভি টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে একটি বড় জাতীয় কার্যক্রম শেষ করেন তারা।

তবে এত বড় দায়িত্ব পালন করার পরও তাদের দাবির বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং উল্টো টিসিভি বাজেট বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চাঁদপুরের দুই স্বাস্থ্য সহকারী—আরিফ মোহাম্মদ রুহুল ইসলাম ও শাহজালাল—কে কুমিল্লা জেলায় বদলি করা হয়েছে। এই বদলিকে ‘অন্যায়’ ও ‘প্রতিহিংসামূলক’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করতে চাইনি। তবুও প্রতিটি আন্দোলনের সময় কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে আমাদের থামিয়েছে। আমরা দায়িত্ব পালন করেছি, কর্তৃপক্ষের কথা রেখেছি কিন্তু তারা আমাদের কথা রাখেনি।’

তাদের দাবি, চাঁদপুরের দুই সহকর্মীর বদলির আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে এবং ছয় দফা দাবির সরকারি আদেশ প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবি হলো:

১. নিয়োগবিধি সংশোধন: স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতাকে অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৪তম গ্রেড প্রদান।

২. টেকনিক্যাল পদমর্যাদা: ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান।

৩. পদোন্নতিতে ধারাবাহিকতা: দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ধারাবাহিক উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, যাতে পদোন্নতি কাঠামো সুসংহত হয়।

৪. স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্তি: স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা।

৫. বেতন পুনর্নির্ধারণ: টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেলের যে সুবিধা কর্মীরা অর্জন করেছেন, তা নতুন বেতন নির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করা।

৬. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমার স্বীকৃতি: ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমানের স্বীকৃতি প্রদান।

স্বাস্থ্য সহকারীরা মাঠে নামলে আবারও দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে টিকাদান কর্মসূচি বড় ধরনের ব্যাঘাতে পড়তে পারে। ইপিআই ও আউটরিচ টিকা কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত হলে কয়েক কোটি শিশুর নিয়মিত টিকাদান সময়সূচি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নেতারা দাবি করেছেন, আইনগত ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বারবার আবেদন করেও যখন ফল পাওয়া যায়নি, তখন কর্মবিরতি ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প পথ ছিল না।