শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:০১ এএম

বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্পে বাংলাদেশে সুনামির ঝুঁকি কতটা?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:০১ এএম

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মাঝে বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাতে বঙ্গোপসাগরে চার মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর একটু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশে সুনামির ঝুঁকি রয়েছে।

সমুদ্রের নিচে ভূমিকম্প কেন হয়? সেগুলো কতটা বিপজ্জনক? আর বাংলাদেশে সুনামির ঝুঁকিই বা কতটা?

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বলছেন, সাগরে যদি ভূমিকম্প ৬ দশমিক ৫ মাত্রার উপরে যায় তারপর সুনামি হবে কি না, সুনামি সার্ভিস প্রোভাইডাররা সেটা পর্যবেক্ষণ করেন। কোন জায়গায় কখন হিট করতে পারে, পানির উচ্চতা কতটা হতে পারে সেটা তারা এলার্ট করে। এটা আমরা সবময়ই টেস্ট বেসিসে করে আসছি।

তিনি বলছেন, বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরে প্রায় ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়, তবে চার মাত্রা বা এর চেয়ে দুর্বল সেসব ভূমিকম্প থেকে বড় পর্যায়ে ক্ষতির শঙ্কা থাকে না।

আবার অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূমিতে বড় ভূমিকম্প হলেও উপকূলে সুনামির শঙ্কা থাকে।

সমুদ্রের নিচে ভূমিকম্প কেন হয়?

পৃথিবীর ওপরের অংশ বা ভূপৃষ্ঠ বিভিন্ন প্লেটে ভাগ করা। এই প্লেটগুলো সবসময় নড়াচড়া করে। কোথাও প্লেট একে অপরকে ঠেলে দেয়, কোথাও পাশ কাটিয়ে যায়, আবার কোথাও নিচে ঢুকে যায়। এমন ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকম্প হয়, তেমন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকেও ভূপৃষ্ঠে কম্পন সৃষ্টি হতে পারে। এটি মাটির উপরে বা পানির নিচে যে কোনো জায়গায় হতে পারে।

২৩ কোটি থেকে ২৮ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর সব মহাদেশ মিলে এরকম একক ভূখণ্ড ছিল বলে তত্ত্ব রয়েছে। এটিকে বলা হয় প্যাঞ্জিয়া। টেকটনিক প্লেটের ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তন থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকগুলো ভূখণ্ড হয়েছিল বলে জানা যায়। এর সপক্ষে অনেক ধরনের প্রমাণও রয়েছে।

এর মাঝে একটি পানির নিচে থাকা দীর্ঘতম পর্বতমালা মিড আটলান্টিক রিজ যেভাবে পৃথিবীকে ভাগ করেছে। এর মাত্র ১০ শতাংশ মাটির উপরে যা আইসল্যান্ডে পরিষ্কার দেখা যায়।

সুনামি কীভাবে তৈরি হয়?

সুনামি অনেকটা বিশাল আকারের জলোচ্ছ্বাসের মতো। সাধারণত ভূমিকম্প হলেই সুনামি হয় না। সুনামির জন্য ভূমিকম্প খুব শক্তিশালী হতে হয়। এ ছাড়া মোটামুটি অগভীর সমুদ্রতলে এরকম কম্পন সৃষ্টি হওয়াটাও একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। আর এমন কম্পন সমুদ্রের তলদেশকে উপরে বা নিচে ঠেলে দিলে, বিশাল পরিমাণ পানি সরে গেলে সেটি সুনামি ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশে সুনামির ঝুঁকি কতটা?

এমনিতে প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীতে ভূতাত্বিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয় অঞ্চল যেটাকে রিং অফ ফায়ার বলা হয়। এরকম বিভিন্ন সক্রিয় অঞ্চল বা সাবডাকশন জোন থাকে।

বড় সুনামি সৃষ্টিকারী সাবডাকশন জোনগুলো বাংলাদেশ থেকে বেশ দূরে। বাংলাদেশ দুইটা বড় টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে, যা চট্টগ্রাম-আরাকান থেকে আন্দামানের দিকে চলে গেছে।

তবে বাংলাদেশে সুনামির ঝুকি নিয়ে অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, বাংলাদেশের খুব কাছাকাছি, সাগরের নিচে খুব নিকটবর্তী সময়ে বড় ভূমিকম্প এবং তা থেকে সুনামির শঙ্কা নেই।

আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বলেন, নরমালি ভূমিকম্প থেকে ওইরকম সুনামির ঝুঁকি নেই, কিন্তু আন্দামান নিকোবরে হলেও ওটা আমাদের জন্য একটা সোর্স অঞ্চল। আমরা টেস্ট বেসিসে সবসময় রেডি থাকি, এটা হলে যেন আমরা সাথে সাথেই সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি।

অতীতের নানা নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে ১৯৬২ সালে আরাকান কোস্টে প্রায় সাড়ে আট মাত্রার একটি ভূমিকম্প থেকে বড় সুনামি হয়েছিল।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেছিলেন, এই প্লেটে ভূমিকম্প হলে অবশ্যই বড় সুনামির আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখানে খুব তাড়াতাড়ি এই বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সে সময়কার তথ্যে জানা যায়, তখন বড় ধরনের সুনামির তৈরি হয়েছিলো, যা উপকূল থেকে অনেকদূর পর্যন্ত ভেতরে এসে পৌঁছেছিল। যদিও তখন মানুষ কম ছিল বলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়তো তত বেশি হয়নি। তবে ঢাকায় নদীর পানি বেড়ে গিয়ে পাঁচশো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা যায়।

ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এরপর আর এই অঞ্চলে এত বড় ভূমিকম্প বা সুনামির তথ্য পাওয়া যায় না। আমাদের হিসাবে, একবার ভূমিকম্প হওয়ার পর ওই প্লেটে শক্তি সঞ্চয় হয়ে পরবর্তী ভূমিকম্প হতে আরও ৫০০ থেকে ৯০০ বছর লেগে যায়। সেই হিসাবে এখানে ওই প্লেটে (আরাকান প্লেটে) ভূমিকম্প হতে আরও দুইশো-আড়াইশো বছর বাকি আছে।

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ‘ফানেল শেপ’ অবস্থায় রয়েছে অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়ে গেছে।

সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেছিলেন, আন্দামান বা ভারত মহাসাগরে যদি বড় সুনামি তৈরি হয়, ফানেল শেপ হওয়ার কারণে তার প্রভাব কিছুটা বাংলাদেশে এসেও লাগবে। তবে সেটা অতোটা ভয়ানক হবে না।

ভূমিকম্প সম্পর্কে খুব আগেভাগে সতর্ক করা সম্ভব না হলেও যেহেতু ভূমিকম্পের পরে পানিতে সুনামির সৃষ্টি হয়, ফলে সুনামি সম্পর্কে আগেভাগে সতর্ক করা যায়। তবে বাংলাদেশের জন্য সমুদ্রে ভূমিকম্পের চেয়ে ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে যে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে সেটিই এখন বেশি শঙ্কার জায়গা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Link copied!