২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যা, নিপীড়ন ও অন্যান্য ঘটনায় দায়ের করা হাজারো মামলার মধ্যে ১০৬টি মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চার্জশিট দেওয়া এই ১০৬টি মামলার মধ্যে ৩১টি হত্যা মামলা এবং ৭৫টি অন্যান্য ধারার মামলা রয়েছে। তবে কোন মামলার অভিযোগপত্র কবে দেওয়া হয়েছে, সেই তারিখ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
অভিযোগপত্র দাখিল হওয়া মামলার বিবরণ
হত্যা মামলা (৩১টি): হত্যা মামলাগুলোর অভিযোগপত্র পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, কুড়িগ্রাম, শেরপুর জেলা সহ পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন), রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃক দাখিল করা হয়েছে।
অন্যান্য ধারার মামলা (৭৫টি): এই ৭৫টি মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, বরগুনা জেলা সহ পিবিআই, সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), ডিএমপি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, আরএমপি, সিএমপি এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অন্যান্য মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ 'সচেষ্ট রয়েছে'।
অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার প্রেক্ষাপট
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ এর 'এ' ধারায় বৈষম্যবিরোধী মোট ৪৩৭টি মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৮৩০ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে 'অন্তর্বর্তী তদন্ত' প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রূপ নেয়। সেই আন্দোলনের তীব্রতায় প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে ব্যাপক প্রতাপে দেশ পরিচালনাকারী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
আন্দোলনের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হলেও, খুব দ্রুতই তা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকার গুলি, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জের মাধ্যমে বলপ্রয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। শুরুতে ফেইসবুক এবং পরে ইন্টারনেট বন্ধ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হলেও, তাতে হিতে বিপরীত হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের সরকারি গেজেট অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা ছিল ৮৩৪ জন। তবে অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হতে পারে।
সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হাজার হাজার মামলা দায়ের করা হয়।



