ইউক্রেইনের ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ‘এমটি কায়রোস’-কে কূলে আনতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাবিক মাহফুজুল ইসলাম প্লাবনসহ চারজনকে উদ্ধার করেছে বুলগেরিয়ান কোস্ট গার্ড।
মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন গণমাধ্যমকে বলেন, রোববার জাহাজে থাকা তিন নাবিক অসুস্থ হয়ে পড়লে কোস্ট গার্ড সদস্যরা হেলিকপ্টারে করে খাবার পৌঁছে দেন এবং পরে আমাদের উদ্ধার করে কূলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে বুলগেরিয়া উপকূলে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ভাসতে থাকা জাহাজ থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি নাবিকরা হলেন— চতুর্থ প্রকৌশলী মাহফুজুল ইসলাম, অয়েলার হাবিবুর রহমান, পাম্পম্যান আসগর হোসাইন ও ডেক ক্যাডেট আল আমিন হোসেন।
উদ্ধার শেষে তাদের তুরস্কের ইজমিত শহরে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে প্লাবন ছাড়া বাকি তিন নাবিক শনিবার তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন।
জ্বালানি নিতে মিশরের সুয়েজ বন্দর থেকে রাশিয়ার নভোরোসিস্ক বন্দরে যাচ্ছিল ২৭৫ মিটার দীর্ঘ চীনা জাহাজ ‘এমটি কায়রোস’।
কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করার সময় তুরস্কের জলসীমায় গত ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ইউক্রেইনের নৌ-ড্রোন হামলার শিকার হয় জাহাজটি।
হামলায় সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে দুই ঘণ্টার মধ্যে ‘এমটি কায়রোস’কে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তুরস্কের কোস্ট গার্ড সদস্যরা ওই জাহাজের ২৫ নাবিককে উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি, ১৯ জন চীনা এবং মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার একজন করে ছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি তুরস্কের উপকূলে আনার জন্য এক সপ্তাহ আগে তুরস্কের কোস্ট গার্ডের সহায়তায় কৃষ্ণসাগরে যান প্লাবনসহ ১০ নাবিক।
জাহাজটিকে টেনে উপকূলের কাছাকাছি আনার পর কোস্ট গার্ড সদস্যরা চলে গেলে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেটি ভাসতে ভাসতে বুলগেরিয়ার সমুদ্র উপকূলে চলে যায়।
নৌ-ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ‘এমটি কায়রোস’ থেকে বুলগেরিয়ার কোস্ট গার্ডের সহায়তা চাইলেও শুরুতে তারা সাড়া পাননি। জাহাজটির ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ায় উদ্ধার কাজে যাওয়া নাবিকদের সঙ্গে থাকা খাবার ও পানি ফুরিয়ে আসে।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নাবিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (আইটিএফ)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উদ্ধার প্রক্রিয়া জোরদার হয়।
মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন বলেন, জাহাজটিতে এখনো চার নাবিক নোঙর করার দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন চীনের এবং একজন মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্লাবনসহ সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তিনি শিগগিরই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।



