অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি- আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম- পদত্যাগ করেছেন। এই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের ফলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, যুব ও ক্রীড়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ শূন্য হয়েছে। এসব শূন্যপদে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, নতুন কাউকে নিয়োগ না দিয়ে বিদ্যমান উপদেষ্টাদের মধ্যেই দায়িত্ব বণ্টন করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি প্রথমে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন- মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের কারণে এ দায়িত্ব গ্রহণে ঝুঁকি দেখেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তাকে রাজি করানো হয়েছে।
এদিকে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন।
অন্যদিকে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক আলী রীয়াজকেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের আরও একটি অংশ বলছে, শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আলোচনায় রাখা হয়েছে।
নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা কম
সরকারি সূত্রগুলোর মতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দিলে সমালোচনা হতে পারে। ফলে তিনটি শূন্যপদে নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা খুবই কম; বরং বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্যেই দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের দিকে সরকার ঝুঁকছে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার অধীনে থাকবে অথবা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্য উপদেষ্টাদের দেওয়া হবে।
কখন, কীভাবে এ শূন্যপদ সৃষ্টি হলো?
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব এবং পরে মাহফুজ আলম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।
নাহিদ ইসলাম ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হওয়ার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া শুরুতে শ্রম এবং যুব–ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। গত নভেম্বরে প্রয়াত উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং সেখান থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে আসছিলেন।
মাহফুজ আলম গত বছরের ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১০ নভেম্বর উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন।
উল্লেখ্য, পদত্যাগের পর প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২৩ থেকে নেমে ২১–এ দাঁড়াবে। পরপর তিন ছাত্র প্রতিনিধি পদত্যাগ করায় উপদেষ্টা পরিষদের গঠনেও পরিবর্তন এসেছে।

