অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে সরকারি সূত্র বলছে, পদত্যাগ এখনো কার্যকর হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে তারা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হবে তাদের পদত্যাগ।
সরকার ও রাজনৈতিক সূত্র জানায়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলম শুরুতে পদত্যাগে রাজি ছিলেন না। তিনি নির্বাচন না করে সরকারে থাকতে চেয়েছিলেন। তবে প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়—নির্বাচনকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পদত্যাগ অবশ্যই করতে হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্তও তিনি পদ ছাড়তে অনাগ্রহী ছিলেন। আগামী সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত উপদেষ্টা পদে থাকতে চান—এমন মতও জানান। তবে বুধবার সকালে বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শ ও সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় পদত্যাগে সম্মত হন তিনি।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মঙ্গলবারই নিজের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার করেন। গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তিনি নির্বাচন করবেন—কোন দল থেকে করবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে বিদায়ও নেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিচ্ছেন আসিফ, অনিশ্চিত মাহফুজ
কোন দল থেকে তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন- সে বিষয়ে দীর্ঘদিন জল্পনা থাকলেও বুধবার সন্ধ্যায় নতুন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এদিন, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান জানিয়েছেন, আসিফ মাহমুদ পুনরায় তাদের দলে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
রাশেদ খান বলেন, আগেও তিনি গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নেতৃত্ব পর্যায়ে তাকে ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনাও চলছে, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে মাহফুজ আলম এখনো নিশ্চিত নন, তিনি নির্বাচন করবেন কি না। এনসিপি লক্ষ্মীপুর-১ আসনটি তার জন্য খালি রেখেছে।
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের একাধিক সূত্র বলছে, দুই উপদেষ্টাই এনসিপিকে বিএনপির জোটে নিতে চেয়েছিলেন। তবে আসন সমঝোতা ও জামায়াত ইস্যুতে সমীকরণ জটিল হয়ে যাওয়ায় বিএনপির জোটে এনসিপি যাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। বিএনপি ইতিমধ্যে লক্ষ্মীপুর–১ ও ঢাকা–১০ আসনে নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা
বুধবার সন্ধ্যায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন দুই উপদেষ্টা। পরে প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ড. ইউনূস তাদের অবদান স্মরণ করে ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য কামনা করেছেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে তোমরা সম্মুখসারিতে থেকে যে ভূমিকা রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। গণতান্ত্রিক উত্তরণেও তোমরা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
আইনগত দিক
সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিলে পদ শূন্য হয়। উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পদ শূন্য হওয়ার কথা। তবে সরকারি সূত্র জানায়, বিদায়ী সংবর্ধনা দিতেই তাদের আজকের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন