সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ওমর ফারুক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ১১:৫৩ এএম

‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’

ওমর ফারুক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ১১:৫৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তখন আমি ক্লাশ নাইনে পড়ি। সকালে ঘুম ভাঙতো চাচাতো ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক পাওয়া লাল রঙের ন্যাশনাল ব্রান্ডের টুইন ওয়ান এ বিভিন্ন জারি-সারি আর বাউল গান শুনে। আমার বিরক্ত লাগতো। এরপর আব্বু কিনলেন সনি ব্রান্ডের কালো রঙের টুইন ওয়ান। উদ্দেশ্য ছিল ওয়াজ শুনবেন-সাথে হেমন্ত, লতা, সতিনাথের গান। কিন্তু আমার এসব ভালো লাগে না। আমার মন কি যেন একটা খুঁজে, আমি শান্ত হতে পারি না। জানতে পারি, একটি অডিও ক্যাসেটের দাম ৩০ টাকা। স্কুলের টিফিনে যেখানে ২ টাকা হলে পেটপুরে সিঙ্গারা খেতে পারি। সেখানে ৩০ টাকা আমার কাছে স্বপ্নের মতই।

এক বড়ভাই এর মাধ্যমে জানতে পারি, পুরানো অডিও ক্যাসেট নিয়ে গেলে ১০ টাকার বিনিময়ে নতুন ক্যাসেটের গান রেকর্ডিং করা যায়। তখন আমি গঞ্জে যাই, তখনো যানি না, ওয়াজ কেটে আমি কি রেকর্ডিং করবো। ক্যাসেটের দোকানে যেতেই চোখ পরলো একটি ক্যাসেট। যেখানে কপালে হাত দিয়ে সোফায় আনমনা হয়ে ঘুমের ভঙ্গিতে বসে আছেন একজন। ডান পাশে লেখা ‍‍`কষ্ট‍‍` আর বাম পাশে আইয়ুব বাচ্চু। সেই থেকে পরিচয়। রেকর্ডিং করে নিয়ে আসলাম ‍‍`কষ্ট‍‍`। আমি আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনি, এলাকার লোক আমাকে পাগল বলে। আমি মেনে নেই। কেননা প্রেমে পড়ে যাই গানের। প্রেমে পড়ে যাই আইয়ুব বাচ্চুর। আমার মনে হল, আমি যা খুঁছিলাম তা পেয়ে গেছি।

এরপর চলতেই থাকলো এই প্রেম। নিয়মিত খোঁজ নিতাম, কবে আসবে তার নতুন গান। কিন্তু পুরানো ক্যাসেট গান রেকর্ডিং শুনে মনে একটু অপূর্ণতা থেকেই যেত। একটু বড় হলাম। আমি তখন ৩০টাকা দিয়ে ক্যাসেট কিনতে পারি। এরপর থেকে আইয়ুব বাচ্চুর সলো, মিক্সড, ডুয়েট কোন ক্যাসেটই কিনতে ভুলি নাই। আরও একটু বড় হবার পর পড়াশোনার জন্য চলে এলাম ঢাকায়। যুক্ত হলাম বিনোদন সাংবাদিকতার সাথে। সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় লোভ সামলাতে পারিনি এই লিজেন্ড এর সাথে দেখা করার। বেশ কয়েকবার তার সাথে আমার দেখো হয়েছে। প্রথম পরিচয়ের পর, যতবারই দেখা হয়েছে, হাতটা বাড়িয়ে বলেছেন- কিরে ক্যামন আছিস? সব চলছে ভালো? আর তখন আমি মাথা নাড়তাম।

সর্বশেষ তার গিটারের যাদু দেখেছিলাম রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাফ্লিক্স প্রেজেন্টস ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’ নামের গিটার শো-তে। সেখানে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘এলআরবি’র এই কর্ণধারের গিটারের তালে মেতে উঠেন হল ভর্তি দর্শক। আর মেতে না উঠার কি কোন কারণ আছে? তিনি গিটারের তারে আঙ্গুল লাগালেই যে, মুগ্ধতা ছড়ায়। মাতাল করে দেয় দর্শকসহ সবাইকে।

পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে নিয়ে গর্বের নতুন উপলক্ষ তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশের গিটারের এই জাদুকর। তার গিটারের ঝংকারে মুগ্ধতা ছাড়া আর কিই ছিলো। তবে একটা অপূর্ণতা থেকেই গেল আমার জীবনে। কেননা আবারও মুগ্ধ হয়ে অপলক নয়নে কান খাড়া শুনতে চেয়েছিলাম গান গিটারের টুংটাং। এই অপূর্ণতা আমাকে সারাটা জীবন ভোগাবে, কষ্ট দেবে। চাইলেও আর শুনতে পাবো না ছয় তারে, তার পাঁচ আঙ্গুলের ছোয়ার কোন ধ্বনি।

বাচ্চু ভাই, ও বাচ্চু ভাই... এমন কিন্তু কথা ছিলো না।  

তারপর একদিন.. ভরা জোৎস্নায়, আমি চলে যাবো একমাত্র নিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে, চির নবান্নের দেশে। জেনে যাবো-‍‍`‍‍`সবকিছু বড় দেরিতে আসে, বড় দেরিতে ধরা দেয়; হারিয়ে যায় সেও হঠাৎ করেই।‍‍`‍‍`

শুধু কষ্টটা থেকে যায়-আসলে কষ্টটা এভাবেই ছিল-কষ্টটা এভাবেই থাকে। (কষ্ট অ্যালবামের কভারে এই লেখাটাই ছিলো , বাচ্চু ভাই) এই লেখার টানেই হয়তো ভালোবেসেছিলাম এতটা বাচ্চু ভাই।

আমাদের সেই তুমিরা যখন কষ্ট দিয়ে অচেনা হয়ে যেত, তখন আপনিই ছিলেন আমাদের একমাত্র আপন, আমাদের ভালো থাকার ভরসার যায়গা।

প্রিয় লিজেন্ড, ভালো থাকবেন ওপারে, ভরা জোৎস্নার সাথে, আপনার নিশ্চয়তার সাথে। আমি, আমরাও আসছি, দেখা হবে হয়তো।

শুভ জন্মদিন বস্। শুভেচ্ছা নিবেন। শ্রদ্ধা নিবেন।

আরবি/জেআই

Link copied!