মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

মেজর সিনহা হত্যা: ন্যায়বিচারই একমাত্র প্রত্যাশা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে ২ জুন সোমবার হাইকোর্ট রায় দেবেন বলে কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শুরু হয়।

এ দিনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সব সাক্ষী বলেছেন, মেজর সিনহা গাড়ি থেকে নেমে নিরস্ত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় তাঁকে দুটি গুলি করা হয়। পরে আরো দুটি। এরপর গলায় পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

মেজর সিনহাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। মেজর সিনহার মৃত্যু গোটা দেশকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যে, থাই পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে আছে।’

এখানে স্মরণ করা যায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন।

এদিকে, ২০২০ সালের এই মর্মান্তিক হত্যা মামলার দ্রুত বিচার ও দোষীদের ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। ২৬ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের পর মেজর সিনহার পরিবারের অনেকটা অসহায় অবস্থা এবং বিচারের আকুতি সম্পর্কে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, গত তিন বছর ধরে মেজর সিনহার মা এবং পরিবারের সদস্যরা সুবিচারের আশায় দেশের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তাঁরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছেন। এরপরও মামলার রেফারেন্স শুনানি এবং বিচারিক কার্যক্রম অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পরও এই অচলাবস্থা কাটেনি।

বক্তারা অনেকটা অনুযোগের সুরেই বলেছেন, ‘আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। বর্তমান সময়ে বিচারপতি সাগির ও বিচারপতি মোস্তাফিজের নেতৃত্বে একটি ডিভিশন বেঞ্চ গঠিত হয়েছে, যা আমাদের নতুন করে আশাবাদী করেছে। আমরা আশা করি, দেশের ভেতর বা বাইরের কোনো প্রভাব, প্রতিপত্তি বা রাজনৈতিক চাপ ছাড়া এই মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু বিচারের আশা জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া বজায় থাকলে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। গত তিন বছরে যা হয়নি, সেটা এখন তিন দিনেও সম্ভব হতে পারে।’

সুস্পষ্ট ভাষায় তারা দাবি করেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে আসামিপক্ষের শুনানি সম্পন্ন করে, প্রদীপ কুমার দাস ও লিয়াকত আলীসহ সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে দ্রুত ফাঁসির রায় ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে।’

নিজেদের দৃঢ়তার কথা তুলে ধরে এক্স–ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, ‘সিনহা হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’

একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, ‘রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি, প্রলোভন বা রাজনৈতিক চাপ যেন আপনাদের প্রভাবিত করতে না পারে। রায় ঘোষণার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের উদ্দেশে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আপনার কার্যক্রম ঠিক করেন। দেশের বিপক্ষে কাজ করবেন, সেটা কিন্তু হবে না।’

মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কোনো মামলায় বিচারিক আদালতে রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত।

স্মরণীয় যে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ৫১তম বিএমএ লং কোর্সে যোগদান করেন। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে তিনি এসএসসি এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার পিতা সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সিনহা ছিলেন মেজো। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে। হত্যাকাণ্ডের দিন তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ‘জাস্ট গো’ নামে একটি প্রমাণ্যচিত্রের কাজেই তিনি কক্সবাজার অবস্থান করছিলেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে মেজর মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী ৪টি গুলি করে তাকে হত্যা করে। লিয়াকত আলী পুলিশের বিশেষ দল সোয়াটের সদস্য। তাকে গুলি করার আদেশ দেয় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন মেজর সিনহা। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরবর্তীতে ওসি প্রদীপ কুমারও ২টি গুলি করে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর একটি ট্রাকে করে মেজর সিনহাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এখানে খুবই উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ছিলেন। তিনি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক এবং নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাতে যদি পুলিশের কোনো আপত্তি থাকে তাহলে পুলিশ হয়তো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা আটকও করতে পারত।

কিন্তু তা না করে তাকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে মানবাধিকারের বিন্দুমাত্র রক্ষা করা হয়নি। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা এভাবে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে কেন- কাউকেই হত্যা করতে পারে না।

বিষয়টি তখনই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাবেক ও বর্তমান সেনারা কেউই ভালোভাবে নিতে পারেননি। এটা যে সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড তাও আদালতে প্রমাণিত। এখন এর সুষ্ঠু ও ন্যায্যবিচার সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।

এই প্রত্যাশায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের পরিবার প্রতীক্ষা করছে। তারা ভীষণভাবে আশায় বুক বেধে রয়েছে ন্যায়বিচার ও দোষীদের শাস্তি দেখার জন্য। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া এখন এই দেশের, এই সমাজের দায়িত্ব।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!