সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান 

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

হালকার উপর ঝাঁপসার আইসিটি বাজেট 

মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান 

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তিগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত অন্যতম। এই খাতটি একদিকে যেমন দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে।

ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার রপ্তানি, আউটসোর্সিং এবং ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে আইসিটি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা এনেছে।কিন্তু সম্প্রতি এই খাতে সরকারি বাজেট বরাদ্দ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে, যা দেশের ডিজিটাল অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তিখাতের সম্প্রসারণ, গবেষণা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে।

গত কয়েক বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আইসিটি খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রকৃত চাহিদার তুলনায় নগণ্য। এটি শুধু বর্তমানের সম্ভাবনাকে ব্যাহত করছে না, ভবিষ্যতে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ারও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

২০২১-২০২৫ সালে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বাজেট বরাদ্দের চিত্র

বাংলাদেশের উন্নয়নে আইসিটি খাতের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এই খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। নিচে ২০২১ থেকে ২০২৫ অর্থবছরের (প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ সহ) আইসিটি খাতের বাজেট বরাদ্দের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে।

২০২১-২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আইসিটি খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিসংখ্যান

 

অর্থবছর

মোট বাজেট (কোটি টাকা)

আইসিটি বরাদ্দ (কোটি টাকা)

মোট বাজেটের %

গত বছরের তুলনায় পরিবর্তন

২০২১-২২

৬,০৩,৬৮১

১,২৭৩

০.২১%

-

২০২২-২৩

৬,৭৮,০৬৪

১,৩৮৬

০.২০%

৮.৮%

২০২৩-২৪

৭,৬১,৭৮৫

১,৫০২

০.১৯%

৮.৪%

২০২৪-২৫ (প্রস্তাবিত)

৮,৫০,০০০*

১,৬২৫*

০.১৯%*

৮.২%*

         

*২০২৪-২৫ সালের তথ্য প্রাক্কলিত (সূত্র: অর্থ মন্ত্রণালয় ও BTRC রিপোর্ট)।

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের বর্তমান অবস্থান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আমরা এখনো একটি নাজুক ও পিছিয়ে পড়া অবস্থানে রয়েছি।

বিশেষ করে যখন আমরা ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তুলনা করি—যেখানে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ, বিস্তৃত ডিজিটাল অবকাঠামো এবং বহুমাত্রিক রপ্তানি সক্ষমতা তৈরি হয়েছে—তখন বাংলাদেশের অগ্রগতি খুবই সীমিত ও ধীরগতির বলে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের আইসিটি খাত: আন্তর্জাতিক তুলনামূলক পরিসংখ্যান (২০২৪-২৫)

সূচক

বাংলাদেশ

ভারত

ভিয়েতনাম

মালয়েশিয়া

জিডিপি বরাদ্দ (%)

০.৯%

২.৫%

৩.৮%

৪.১%

বাজেট বরাদ্দ

১,৬২৫ কোটি টাকা

১,৪৪,০০০ কোটি টাকা

৮৯,০০০ কোটি টাকা

১,১২,০০০ কোটি টাকা*

আইসিটি রপ্তানি (USD)

১.৫ বিলিয়ন

১৯৪ বিলিয়ন

১৪০ বিলিয়ন

৮২ বিলিয়ন

ফাইবার অপটিক কভারেজ

৪০%

৭৫%

৯৫%

৮৮%

গবেষণা বিনিয়োগ (জিডিপি %)

০.০২%

০.৭%

০.৫%

১.২%

বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ

২০%

৬০%

৫৫%

৬৫%

বার্ষিক আইটি গ্র্যাজুয়েট

৩০,০০০

৫,০০,০০০

৮০,০০০

৪৫,০০০

৫জি বাস্তবায়ন

পাইলট প্রকল্প

জাতীয় পর্যায়ে

প্রধান শহরগুলোতে

সম্পূর্ণ কভারেজ

স্টার্টআপ ফান্ডিং (USD)

১২০ মিলিয়ন

২৫ বিলিয়ন

২.১ বিলিয়ন

১.৮ বিলিয়ন

ডাটা খরচ (USD/GB)

০.৭৫

০.০৯

০.১৫

০.২৮

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ন্যূনতম ৩ গুণ বাজেট বৃদ্ধি এবং সম্পূর্ণ নীতি সংস্কার প্রয়োজন। অবকাঠামো ও মানবসম্পদ ঘাটতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, নতুবা প্রতিযোগীদের সাথে ব্যবধান আরও বাড়বে।

 তাহলে কেমন হওয়া উচিত বাংলাদেশের আইসিটি বাজেট?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতকে শুধু একটি শিল্প খাত হিসেবে না দেখে, এটিকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, ডিজিটাল শিক্ষা, তরুণদের চাকরির সুযোগ এবং নতুন উদ্ভাবনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভাবা জরুরি। এই খাতে সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ হলে দেশ আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে।

আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় টিকে থাকতে হলে ICT খাতে বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি বাজেট দরকার। এতে করে শুধু অর্থনীতি নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতেও ডিজিটাল উন্নয়ন ঘটবে এবং টেকসই অগ্রগতি সম্ভব হবে।

আমার মতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইসিটি খাতকে বিবেচনা করতে হলে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভকে নিয়ে পরিকল্পনা ও বাজেট সাজাতে হবে। 

 

১। অর্থনীতিতে বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ বাজেট পরিকল্পনা :

বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) খাতে বরাদ্দ খুবই কম—মোট বাজেটের ১% এরও কম। ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশ এই খাতে অনেক বেশি বাজেট দেয়, যা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে।

অথচ “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বাস্তবায়ন ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ICT খাতকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

এই খাতে বাজেট বাড়িয়ে অন্তত ২.৫% থেকে ৩% করা উচিত, যা প্রায় ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ কোটি টাকার মতো হতে পারে—এটি বর্তমান বরাদ্দের প্রায় তিনগুণ। এই বাড়তি বাজেট খরচ করতে হবে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়:

ক. উন্নত ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি – যেমন ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, ৫জি, বড় ডাটা সেন্টার ইত্যাদি।

খ.তরুণদের প্রশিক্ষণ – কোডিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), আইওটি, এবং নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষতা বাড়ানো।

গ. গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ – বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে AI ল্যাব বা ব্লকচেইন গবেষণার মতো উদ্যোগ নেওয়া।

ঘ. স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা – নতুন উদ্যোগকে সহায়তা করতে ফান্ড, ইনকিউবেশন সেন্টার ও বিনিয়োগ নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

ঙ. সাইবার নিরাপত্তা জোরদার – অনলাইন হুমকি মোকাবেলায় শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও জনসচেতনতা বাড়ানো।

এই ধরনের বাজেট পরিকল্পনা শুধু ICT খাতকে নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্পসহ সব খাতকে ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করবে, অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে, নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।

২। দীর্ঘমেয়াদী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট কাঠামো দরকার  

বাংলাদেশের মতো একটি দ্রুত এগিয়ে যাওয়া দেশের জন্য আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) খাতকে শুধু এক বছরের বাজেট দিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এই খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে দীর্ঘমেয়াদী, ধারাবাহিক ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার প্রয়োজন, অন্তত ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য।

বর্তমানে আইসিটি খাতে যে অল্প বাজেট বরাদ্দ হয়, তা দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের গতি ধরে রাখতে যথেষ্ট নয়। 

 

তাই একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দরকার, যেখানে নির্দিষ্ট লক্ষ্য, সময়সীমা ও অগ্রগতির পরিমাপের উপায় থাকবে। এই পরিকল্পনায় শুধু সরকার নয়, বেসরকারি উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদেরও যুক্ত করতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া বা সিঙ্গাপুর যেমন বিশেষ দল গঠন করে যৌথভাবে আইসিটি পরিকল্পনা করে, বাংলাদেশেও তেমন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে এই পরিকল্পনাকে “ডিজিটাল ইকোনমি এক্সিলারেশন প্রোগ্রাম”-এর মতো প্রকল্পের সাথে যুক্ত করে আইটি পার্ক, হাইটেক জোন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

এর মাধ্যমে দেশের তরুণদের দক্ষ করে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।

৩। গবেষণা ও উদ্ভাবনে বরাদ্দ বাড়ানো অপরিহার্য

গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। বর্তমানে আমাদের দেশে গবেষণা ও উন্নয়নের (R&D) জন্য জাতীয় বাজেটের মাত্র ২%-এরও কম বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েল বা সিঙ্গাপুরের মতো দেশের তুলনায় অনেক কম।

এই খাতে এত কম বিনিয়োগের কারণে আমরা প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছি। তাই আইসিটি বাজেটের অন্তত ১৫-২০% গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। বিশেষ করে AI, IoT, Blockchain, Machine Learning ও Cyber Security-এর মতো নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে, কারণ এগুলোর ওপর ভর করেই ভবিষ্যতের ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে উঠবে। 

এই বরাদ্দ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে AI ল্যাব, IoT ইনোভেশন সেন্টার এবং Blockchain রিসার্চ স্থাপন করা দরকার। এছাড়া সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে “জাতীয় টেক এক্সিলারেশন প্রোগ্রাম” চালু করতে পারে, যা গবেষণায় একসাথে কাজ করার সুযোগ দেবে।

এক্ষেত্রে একটি "রিসার্চ কোলাবোরেশন ফান্ড" গঠন করা যায়, যেখানে সরকার, প্রাইভেট কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মিলে অর্থায়ন করবে এবং গবেষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য অনুদান, ফেলোশিপ ও প্রোটোটাইপ তৈরির জন্য সহায়তা দেবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণার মান বাড়াতে “প্রকাশনা ও পেটেন্ট-ভিত্তিক পুরস্কার” চালু করা উচিত, যাতে গবেষণার ফল ব্যবহারিক উদ্ভাবনে রূপ নেয়।

পাশাপাশি, সিলিকন ভ্যালির মতো প্রযুক্তি কেন্দ্র তৈরির জন্য দেশে "ইনোভেশন ডিস্ট্রিক্ট" গড়ে তোলার প্রয়োজন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আইটি কোম্পানি একসাথে কাজ করবে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ হিসেবেই থাকবে, কিন্তু যদি এই বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে আমরা AI-ভিত্তিক কৃষি, স্মার্ট সিটি, Blockchain আইডেন্টিটি এবং সাইবার নিরাপত্তা পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারব।

৪।তথ্য প্রযুক্তির মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ


বাংলাদেশের ৬৫% তরুণ জনসংখ্যা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলেও, প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েটের অনেকেই চাকরি বা কাজ পাচ্ছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে তাদের হাতে-কলমে দক্ষতা কম, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার সুযোগ নেই, আর বাস্তব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল শেখা হয়নি।

এই সমস্যা দূর করতে হলে একটি বড় ধরনের ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বই-পুস্তকের পড়া নয়, এমন প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা কাজ শিখে চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে। এজন্য প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে “ডিজিটাল এক্সিলেন্স সেন্টার” বানাতে হবে, যেখানে ফ্রিল্যান্সিং, ডিজাইন, ক্লাউড, সাইবার সিকিউরিটি, গেম, AR/VR ইত্যাদি শেখানো হবে।

এরপর একটি জাতীয় অনলাইন প্রশিক্ষণের প্ল্যাটফর্ম দরকার, যেখানে বিশ্বমানের কোর্স বাংলায় পাওয়া যাবে, যেন গ্রামের তরুণরাও শেখার সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিকে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে বাস্তবমুখী কোর্স চালু করতে হবে।

 প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের ইন্ডাস্ট্রি ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে তারা বাস্তবে কাজ শিখে নিতে পারে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের আইটি কোম্পানি বা অনলাইনে কাজের সুযোগে সংযুক্ত করতে হবে।

এসব কার্যক্রমের জন্য কমপক্ষে ৩,০০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন, যাতে প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং শিল্প-সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সাথে কাজ করা যায়। পাশাপাশি দরিদ্র কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য “ডিজিটাল স্কলারশিপ প্রোগ্রাম” চালু করতে হবে, যাতে তারা বিনা খরচে শেখার সুযোগ পায়।

এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতি বছর এক লাখ নতুন আইটি দক্ষ তরুণ তৈরি করা সম্ভব, যারা দেশ-বিদেশে কাজ করে বাংলাদেশের আইটি রপ্তানি বাড়াবে, বেকারত্ব কমাবে এবং দেশকে বিশ্বমানের টেক প্রতিভার কেন্দ্র বানাবে।

 

৫।ডিজিটাল অবকাঠামো ও ইন্টারনেট সম্প্রসারণে জোর

"ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম ও দুর্গম এলাকায় উন্নতমানের ডিজিটাল অবকাঠামো পৌঁছানো জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতি ৩০ এমবিপিএসেরও কম, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে এবং গ্রামাঞ্চলে এর মান আরও খারাপ।

এই অবস্থার উন্নয়নে প্রথমে প্রয়োজন “জাতীয় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ককে” বিস্তৃত করা, যাতে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পৌঁছে যায়। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি উপজেলায় “ডিজিটাল টেক এক্সেস পয়েন্ট” তৈরি করতে হবে, যেখানে সাধারণ মানুষ উচ্চগতির ইন্টারনেট, ই-গভর্নেন্স, অনলাইন শিক্ষা ও টেলিমেডিসিন সুবিধা পাবে।

তৃতীয়ত, -জাতীয় ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও ডেটা গ্রিড- তৈরি করতে হবে, যাতে সব সরকারি-বেসরকারি তথ্য নিরাপদে রাখা যায় এবং স্থানীয়ভাবে ডেটা সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়—এজন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক মানের -ডেটা সেন্টার- গড়তে হবে। চতুর্থত, দেশের সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় -স্মার্ট ক্লাসরুম- চালু করতে হবে, যেখানে থাকবে দ্রুত ইন্টারনেট, ডিজিটাল পাঠ্যবই, ইন্টারেক্টিভ লার্নিং টুল ও ভার্চুয়াল ল্যাব, যা শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনবে। 

পঞ্চমত:  ৫জি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে এবং ডিজিটাল বিভক্তি দূর করতে -গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সাবসিডি- দিতে হবে, যাতে দরিদ্র মানুষও কম দামে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। এসব কাজ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে ডিজিটাল অবকাঠামোর বাজেট অন্তত -৫০% বাড়িয়ে- প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা করতে হবে, যা ব্যয় হবে ফাইবার অপটিক কেবল বসানো, সাবমেরিন কেবল বাড়ানো, ডিজিটাল সেন্টার তৈরি ও প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে।

এ ছাড়া, -ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি- নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করা যেতে পারে, যারা এসব প্রকল্প সমন্বয় ও তদারকি করবে। এই বিনিয়োগ শুধু ইন্টারনেটের গতি বাড়াবে না, বরং ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট কাজ, ডিজিটাল ব্যাংকিং ও স্মার্ট কৃষিক্ষেত্রকে এগিয়ে নেবে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময়ে যখন বাসা থেকে কাজ ও অনলাইন শিক্ষাই সাধারণ হয়ে গেছে, তখন এই ডিজিটাল অবকাঠামো বাংলাদেশের টেকসই অর্থনীতির মূল ভিত্তি হয়ে উঠবে। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিক ১০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে এবং " জিজিটাল অর্থনীতির " বাস্তবায়নের পথে বড় অর্জন হবে।

৬।স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে সহায়ক প্যাকেজ 

বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গত ১০ বছরে অনেক অগ্রগতি করেছে। এখন দেশে ২০০০-এর বেশি স্টার্টআপ কাজ করছে, যেমন Pathao, ShopUp, bKash – যারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোটি টাকার ফান্ডিং পেয়েছে এবং দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।

তবে এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে এখনো কিছু বড় চ্যালেঞ্জ আছে – যেমন অর্থের অভাব, ভালো ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ঘাটতি, কঠিন নীতিমালা এবং সরকারি সহায়তার অভাব।

এসব সমস্যা দূর করতে দরকার একটি "বড় এবং সমন্বিত স্টার্টআপ সহায়তা প্যাকেজ"। প্রথমত, সরকারকে "১০০০+ কোটি টাকার স্টার্টআপ ইনোভেশন ফান্ড" গঠন করতে হবে, যাতে নতুন স্টার্টআপগুলো প্রারম্ভিক (Seed) ও বৃদ্ধি পর্যায়ে (Growth-stage) অর্থ পায়। দ্বিতীয়ত, নতুন স্টার্টআপদের আর্থিক চাপ কমাতে "প্রথম ৫ বছরের জন্য করমুক্ত সুবিধা (Tax Holiday)" দিতে হবে, যেন তারা বেশি করে পণ্য তৈরি ও বাজারে ছড়াতে পারে।

তৃতীয়ত, সরকারকে স্টার্টআপদের কাছ থেকে পণ্য ও সেবা কেনার জন্য "সহজ ও স্বচ্ছ ক্রয় পদ্ধতি" চালু করতে হবে, যাতে তারা নিশ্চিত আয় পায়।চতুর্থত, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে "বিশ্বমানের টেক ইনকিউবেটর ও এক্সিলারেটর হাব" গড়তে হবে, যেখানে স্টার্টআপরা অফিস, মেন্টর, নেটওয়ার্ক ও বিনিয়োগকারীদের সংযোগ পাবে।

পঞ্চমত, নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে "বিশেষ তহবিল ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম" চালু করা জরুরি, কারণ এখন মাত্র ১০% স্টার্টআপ নারী নেতৃত্বে চলছে।

এছাড়া, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্টার্টআপদের উৎসাহ দিতে "আঞ্চলিক স্টার্টআপ গ্রান্ট" চালু করতে হবে, যাতে ঢাকাকেন্দ্রিকতা কমে এবং সারা দেশে উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে – যেমন "স্টার্টআপদের জন্য IP (মেধাস্বত্ব) রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো", "বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে Dual Listing সুবিধা", এবং "বিদেশি ট্যালেন্টদের জন্য স্টার্টআপ-বন্ধু ভিসা নীতি", যাতে তারা বাংলাদেশে এসে কাজ করতে পারে।

এই উদ্যোগগুলো বাস্তব হলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাত ৫ গুণ বড় হবে, জিডিপিতে বড় ভূমিকা রাখবে, লক্ষ তরুণের জন্য চাকরি তৈরি করবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বমানের টেক দেশের তালিকায় নিয়ে যাবে।বিশেষ করে FinTech, AgriTech, HealthTech এবং EdTech খাতে বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারবে এবং রপ্তানি আয় বাড়াবে।

৭। সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ

বর্তমান ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এমনকি সাধারণ মানুষ প্রতিদিন নানা ধরনের সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে – যেমন ফিশিং, র‍্যানসমওয়্যার, ডেটা চুরি এবং ম্যালওয়্যার আক্রমণ।

এসব হামলা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, বিভিন্ন হাসপাতাল ও কোম্পানির ডেটাবেস হ্যাকিং এবং ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস – এসব ঘটনা এই ঝুঁকির ভয়াবহতা দেখিয়ে দেয়।

এই সমস্যার সমাধানে প্রথমে "জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা ২০২১" বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে – "সাইবার থ্রেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম" তৈরি, "জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার (SOC)" স্থাপন, এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর নিরাপত্তায় "এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন" প্রযুক্তি চালু।

দ্বিতীয়ত, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে "সাইবার ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং সেন্টার" গড়তে হবে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, আইটি বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হ্যাকিং প্রতিরোধ, ডিজিটাল ফরেনসিক ও ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের প্রশিক্ষণ পাবে – এতে আন্তর্জাতিক মানের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে।

তৃতীয়ত, স্কুল-কলেজে "সাইবার এথিকস ও ডিজিটাল সিটিজেনশিপ" বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে ছাত্ররা অনলাইনে নিরাপদে চলাফেরা করতে শেখে এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় সচেতন হয়।

চতুর্থত, "জাতীয় সাইবার ইনস্যুরেন্স ফ্রেমওয়ার্ক" চালু করতে হবে, যাতে সাইবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ পায়। পঞ্চমত, "বাংলাদেশ কম্পিউটার সেফটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিডি-সিএসআইআরটি)"-এর সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদে বিনিয়োগ করতে হবে।

এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাজেটে "অন্তত ৫০০ কোটি টাকা" বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন, যা ব্যয় হবে – সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার কেনা, বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা ক্যাম্পেইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর কাজে।

এই বিনিয়োগ শুধু সাইবার হামলা ঠেকাবে না, বরং আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দেবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং "জিজিটাল অর্থনীতির" বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ করে যখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল জিডিপি ২০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া, তখন সাইবার নিরাপত্তা খাতকে জাতীয় উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই দেখতে হবে।

৮। বাজেট বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা 

বাংলাদেশে আইসিটি খাতে বাজেট বাড়ানো ও বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হলেও এসব প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

কারণ, আগের অনেক প্রকল্প ভালো পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ঠিকভাবে কাজ না হওয়া, দুর্বল তদারকি আর দুর্নীতির কারণে সফল হয়নি। এই সমস্যা সমাধানে প্রথমে প্রতিটি আইসিটি প্রকল্পের জন্য "কী পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর (KPI)" নির্ধারণ করতে হবে।

এতে প্রকল্প কতটা এগোচ্ছে, সময়মতো শেষ হচ্ছে কিনা, খরচ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, প্রজেক্টের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা—এসব বিষয় নিয়মিত মাপা যাবে। এই তথ্য প্রতি তিন মাসে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, একটি স্বচ্ছ "আইসিটি বাজেট ট্র্যাকিং ড্যাশবোর্ড" চালু করতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিটি প্রকল্পের বরাদ্দ কত, খরচ কত হলো, কাজ কতটা এগোলো, কোন সংস্থা করছে এবং কে দায়িত্বে আছে—এসব তথ্য সবসময় আপডেট থাকবে। সাধারণ মানুষ, সংবাদ মাধ্যম ও সিভিল সোসাইটি এগুলো দেখে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

তৃতীয়ত, বড় বড় প্রকল্পে "তৃতীয় পক্ষের অডিট" বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে অভিজ্ঞ দেশি বা আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের টাকার হিসাব ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করবে এবং এই প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করতে হবে।চতুর্থত, আইসিটি বিভাগের অধীনে একটি "স্বাধীন বাজেট মনিটরিং সেল" গঠন করতে হবে।

এই সেলের সদস্যরা হবেন সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞ, যারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরাসরি প্রতিবেদন জমা দেবেন।

এই সেল কোনো মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকবে না। তাদের কাজ হবে প্রকল্প তদারকি, দুর্নীতি ও অপচয় ঠেকানো এবং যারা দায়িত্বে থেকে কাজ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা।

পঞ্চমত, একটি " অভিযোগ ও প্রতিকার ব্যবস্থা" চালু করতে হবে, যাতে কোনো প্রকল্পে অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করতে পারে এবং দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়।

এই সব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আইসিটি বিভাগকে একটি সঠিক "বাজেট বাস্তবায়ন নির্দেশিকা (গাইডলাইন)" তৈরি করতে হবে, যেখানে প্রতিটি ধাপে কী করতে হবে তা পরিষ্কারভাবে লেখা থাকবে। আর এই নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তা দেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বার্ষিক মূল্যায়ন করতে হবে।

এইসব ব্যবস্থা নিলে আইসিটি বাজেটের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যাবে, দুর্নীতির সুযোগ কমবে, সরকারি টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে, আর দেশের মানুষ সরাসরি উন্নয়নের সুফল পাবে।

এতে করে “জিজিটাল অর্থনীতির” লক্ষ্য অর্জনের পথে আমরা অনেক এগিয়ে যাব। ডিজিটাল পরিবর্তনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুধু অর্থের সাশ্রয়ই নয়, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্যও সবচেয়ে জরুরি।

সবশেষে বলতে চাই বাংলাদেশ যদি সত্যিই ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্মার্ট রাষ্ট্রে পরিণত হতে চায়, তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি শক্তিশালী, বাস্তবভিত্তিক এবং ভবিষ্যতমুখী বাজেট প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

এই বাজেট কেবল প্রযুক্তিখাতের উন্নয়ন নয়, বরং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তরুণদের কর্মসংস্থান, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, উদ্ভাবন-ভিত্তিক সমাজ গঠন এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার ভিত শক্ত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়া মানেই ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে হাতছাড়া করা।

তাই এখনই সময় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর, যা বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতৃত্বকে প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে এবং "জিজিটাল অর্থনীতির"-এর লক্ষ্যে আমাদের পথকে সুগম করবে।

মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান, তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও উদ্যোক্তা, ফাউন্ডার (আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ)

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!