মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম

প্রশান্ত মহাসাগরে বাড়ছে পানির স্তর: জাতিসংঘ

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর বৃহত্তম গভীরতম মহাসাগর। ইংরেজিতে একে বলে প্যাসিফিক ওশান। প্রায় ২৫ হাজার দ্বীপসহ প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন ১৬৯.২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার; যা পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৩২ শতাংশ। সব জলভাগের ৪৬ শতাংশ এবং পৃথিবীর সব ভূমিপৃষ্ঠের চেয়েও আয়তনে বেশি। বিস্ময়ের শেষ নেই এই মহাসাগরে। এ মহাসাগরের এক অপার প্রাকৃতিক বিস্ময় হলো অনেক জায়গায় একই সাথে দুই রঙের পানির উপস্থিতি। যেন কেউ দাগ কেটে একই সাগরে দুই পাশে দুই রঙের অংশ আলাদা করে দিয়েছে। এর একদিকে হালকা আকাশি রঙের পানি আর অন্যদিকের পানি গাঢ় নীল।  ওয়ার্ল্ড মেট্রোলজিক্যাল অরগানাইজেশন ইতিমধ্যেই জারি করেছে সতর্কতা। পানির স্তর বাড়ছে প্রশান্ত মহাসাগরের। ১৯৯০ সালের পর থেকেই সমুদ্রতীরকে ধীরে ধীরে নিজের গ্রাসে পরিণত করছে প্রশান্ত মহাসাগর। সমীক্ষা থেকে এটাও জানা গেছে, বিগত ৩০ বছরে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে  উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর পানির স্তর বিশ্বব্যাপী গড়ের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত হারে বাড়ছে। প্রতিবছরই প্রশান্ত মহাসাগরের পানির স্তর ০.০২ শতাংশ করে বাড়ছে। আরও চিন্তার বিষয় হলো প্রশান্ত মহাসাগরের ধারে কাছে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এ মহাসাগরের নিচে একটি অঞ্চল আছে যাতে প্রায় ৪৫২টি আগ্নেয়গিরি আছে। এ ভয়ানক অঞ্চলকে বলা হয় ‘রিং অব ফায়ার’। তাই যেকোনো সময়ই আগ্নেয়গিরির অগ্নিউৎপাতে পানির নিচে সৃষ্টি হয় প্রবল ভূমিকম্প। আর তাই সমুদ্রের পানিতে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড ঢেউ। এ রকম দ্বীপগুলো হলো বুগেনভিল, হাওয়াই এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। আবার প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে সর্বাধিক নাটকীয় হলো অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর অবস্থিত গ্রেট বেরিয়ার রিফের প্রবাল প্রাচীরের সারি। ফলে আগামী দিনে এগুলো বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।

এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমি টোঙ্গায় রয়েছি, একটি বৈশ্বিক সতর্কবার্তা জারি করতে ‘সমুদ্রকে বাঁচান’। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপর্যয় এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জকে বিপদের মুখে ফেলছে। দ্বীপপুঞ্জের নিচে বিস্তীর্ণ প্রবাল প্রাচীরগুলো হুমকির সম্মুখীন। ওয়ার্ল্ড মেটারোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন-১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পানির স্তর পরিমাপ করছে। পর্যবেক্ষণে তারা জানিয়েছে, সমুদ্রতীরকে ধীরে ধীরে নিজের গ্রাসে পরিণত করছে প্রশান্ত মহাসাগর। সমীক্ষা থেকে এটাও জানা গেছে, বিগত ৩০ বছরে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কিছু সাইট, বিশেষ করে কিরিবাতি ও কুক দ্বীপপুঞ্জে পানির স্তর সেভাবে না বাড়লেও অন্য সাইটগুলো যেমন সামোয়া এবং ফিজির রাজধানী শহরগুলোর কাছে সমুদ্রের পানির স্তর প্রায় তিনগুণ বেশি বেড়ে চলেছে। নিম্নাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টুভালুতে জমি ইতিমধ্যেই এতটাই দুষ্প্রাপ্য যে, শিশুরা তাদের নিজেদের অস্থায়ী খেলার মাঠ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারমাক ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, টুভালু আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে মুছে যেতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর দুর্দশা অতীতে সহজেই উপেক্ষা করা হয়েছে তাদের আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতা এবং অর্থনৈতিক শক্তির অভাবের কারণে। কিন্তু এই অঞ্চলটিকে বিজ্ঞানীরা ক্রমবর্ধমানভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, যা সম্ভবত গ্রহের অন্যান্য অংশের সম্মুখীন হওয়া সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করছে।

অস্ট্রেলিয়ান জলবায়ু গবেষক ওয়েস মরগান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে এবং জলবায়ু দূষণ কাটানো তাদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। লাখ লাখ বর্গমাইল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ আজ মানবজাতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। জাতিসংঘের মতে, বেশিরভাগ মানুষ উপকূলের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে। ক্রমবর্ধমান সাগর দুষ্প্রাপ্য জমি গ্রাস করছে এবং অত্যাবশ্যক খাদ্য ও পানির উৎসকে ধ্বংস করছে। তা ছাড়াও এখানে রয়েছে ‘ডেভিলস সি’। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে একটি উপসাগরের নাম ‘ডেভিলস সি’। আবার জাপানি উপকূলের কাছে অবস্থিত এ মহাসাগরের একটি অংশের নাম ‘ড্রাগন ট্রায়াংগল’। এখানে বহু জাহাজ ও বিমান হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। অবাক করা ব্যাপার হলো এর রহস্য আজ পর্যন্ত অজানা। তা ছাড়াও এ মহাসাগরে এমন অনেক দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে যা এই বিশ্বের অনেক বড় দেশের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতখানা। এই বিস্ময়কর মহাসাগরে বিস্ময়ের অন্ত নেই। এই সাগরের অতলে রয়েছে জানা-অজানা অনেক প্রাণী। বিশালাকার তিমি থেকে শুরু করে রয়েছে হাঙ্গর, অক্টোপাস, স্কুইড, ডলফিন, শুশুকসহ নাম না জানা অনেক প্রাণী। এ মহাসাগরকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। যত রহস্যই আবিষ্কার হোক না কেন, তাও এর আরও অনেক রহস্য থেকে যায় অজানা। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এ মহাসাগর হলো অজানাকে জানার এক বিপুল ভাণ্ডার। বিশাল পৃথিবীকে সবদিক দিয়ে ঘিরে আছে পৃথিবীর বৃহত্তম সাগর প্রশান্ত মহাসাগর। এ মহাসাগরের প্রতি কোণায় কোণায় রহস্যে ভরপুর।

১৫২১ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিক তথ্য অনুসন্ধানকারী ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান নৌকাযোগে সমুদ্রে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে এই মহাসাগরে এসে সামান্য প্রশান্তি পান। তাই তিনি এই জলভাগের নাম রাখেন মার প্যাসিফিকো। যার অর্থ পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ উভয় ভাষাতেই ‘প্রশান্ত মহাসাগর’। প্রশান্ত মহাসাগর আয়তনে পৃথিবীর মোট স্থলভাগের চেয়েও বড়। আয়তনে ১৬,৫২,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৩৮,০০,০০০ বর্গমাইল) অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরের উপকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। তা ছাড়াও এটি পৃথিবীর মোট জলভাগের উপপরিতলের ৪৬ শতাংশজুড়ে অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগর উত্তরে উত্তর মহাসাগর থেকে দক্ষিণ মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে এর পশ্চিমে রয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব সীমান্তে রয়েছে উত্তর আমেরিকা। এ মহাসাগরের বিস্তৃতি বিশাল। এক কথায়, বলতে গেলে এত বড় মহাসাগরের মধ্যে পাঁচটি চাঁদকে অনায়াসে ডুবিয়ে দেওয়া যাবে। এ মহাসাগরের সবমিলিয়ে থাকা পানির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭১ কোটি ঘনকিলোমিটার বা ১৭ কোটি ঘনমাইল। এ মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা মেরুর কাছে -১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে শুরু করে বিষুবীয় এলাকায় সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। তাপমাত্রার মতো এ সাগরের পানির গুণাগুণ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রশান্ত মহাসাগর। প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরামের নেতাদের সভায় জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, প্রশান্ত মহাসাগর আজ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। জাতিসংঘের মতে, বেশিরভাগ মানুষ উপকূলের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে। ক্রমবর্ধমান সাগর দুষ্প্রাপ্য জমি গ্রাস করছে এবং অত্যাবশ্যক খাদ্য ও পানির উৎসকে ধ্বংস করছে বলে জানান জাতিসংঘের মহাসচিব। 
 

সম্পাদক, রূপালী বাংলাদেশ
 

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!