বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ড. অরূপরতন চৌধুরী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:৫১ এএম

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণসমাজ

ড. অরূপরতন চৌধুরী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:৫১ এএম

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণসমাজ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশ। রক্তচোষা শাসকরা যুগ যুগ ধরে স্বর্ণভূমির এই দেশ ও মানুষকে শোষণ করেছে। সেটা ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তানি- সবাই। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ও বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধূর্ততা ও শোষণ এমনকি, শাসনের নামে পৈশাচিকতা ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রেখেছে, যা যুগ যুগ ধরে থেকে যাবে। তবে ক্ষমতার লোভে যারা অন্যায়ভাবে শাসন করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। মুক্তিকামী প্রাণের বাসনা দমিয়ে রাখা যায় না। পাকিস্তানিরাও হয়তো বুঝতে পারেনি তাদের পতন অত্যাসন্ন। তার প্রমাণ- মহান ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বীরদের গৌরবময় বিজয়। তাও আবার সেটা যুদ্ধাস্ত্রসজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অসংখ্য কিশোর-তরুণ ও সাধারণ জনতা শহীদ হয়েছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ বরাবরই সোচ্চার। অধিকার আদায়ে রক্ত দেওয়ার নজির বিশ্বে খুব কম। আমরা সেই ভাগ্যবান জাতিদের অন্যতম।

মাতৃসম এই সবুজ, শ্যামলা জন্মভূমি ধীরে ধীরে বিজয়ের গৌরবময় হীরক জয়ন্তী ও শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পথচলার সবকিছু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করা আছে, থাকবে। পরিবর্তনের এই ধারাগুলো বেশকিছু অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাই কঠিন বাস্তবতা হলো- সুবর্ণ জয়ন্তীর কঠিন পথচলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নানাবিধ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। মাতৃভূমির আগামীর পথচলা আরও মসৃণ হবে, এটা কোটি কোটি দেশপ্রেমী জনগণের মনের সুপ্ত বাসনা যা আমাকেও সঞ্চারিত করে।

এটা গোপন কথা নয় যে, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন, সম্পদের অব্যবস্থাপনার কারণে চরম অবহেলিত ও জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ। আজ অর্ধশত বছর পেরোতেই সেই বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হয়েছে। উন্নয়নের স্রোতধারায় দেশের অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। জিডিপি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বড় সাফল্য মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমানো। এ ছাড়া সংক্রামক ব্যাধি নির্মূলে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। যদিও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ স্বাস্থ্য খাতের বড় শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং চোখ রাঙানি দিচ্ছে। তবু আমার মনে হয়, সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। অপরদিকে, অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি ও নানামুখী সংকটে গত কয়েক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে কয়েকগুণ, যা মানুষের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়! এদিকটায় নজর দেওয়া অতীব জরুরি।

সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে যে সমীহ আদায় করতে পেরেছে, যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে সেটা মূলত দেশপ্রেমী জনগণের বড় অর্জন। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রবাসী এবং সর্বস্তরের মানুষ ও সব পেশাজীবীদের শরীরের রক্ত পানি করা শ্রম ও ত্যাগের ফসল আজকের বাংলাদেশ।

পৃথিবীতে প্রায় সব উন্নত ও সভ্য জাতির সাফল্যের বড় পাথেয় হচ্ছে জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ। জনগণই সবকিছুতে মুখ্য, গৌণ নয়। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সেই সমস্ত রাষ্ট্র নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সদা তৎপর। এজন্যই তারা সফলতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।

বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ। বর্তমানে ৪৯% জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশকে ‘ইয়ুথ ডিভিডেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। আগামী দিনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি নির্ভর করছে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর। কিন্তু, ভয়ের কারণ বর্তমান শিশু-কিশোর ও তরুণদের বিপথগামিতা। মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং এমনকি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। বর্তমানে দেশে ১ কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার এবং ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত! মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে অপরাধ, অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে! সুযোগ লুফে নিচ্ছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা।

গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপান মাদকের নাটের গুরু। শুরু থেকেই বলে আসছি সেটা। উঠতি বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা উদ্বেজনকভাবে বাড়ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ছে। এটা সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন বা নির্বাচিত সরকার যারাই আসুক না কেন, সবাইকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, সামনে আর কঠিন সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এই পরীক্ষায় বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। এই ধূর্ত তামাক কোম্পানিরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার উন্মত্ত নেশায় আমাদের শিশু-কিশোর, তরুণদেরই বলির পাঠা হিসেবে বেছে নিয়েছে! প্রতিদিনই তারা দেশের আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্নভাবে কিশোর-তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে সিগারেটের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা চালাচ্ছে অবলীলায়।
তামাক কোম্পানিগুলো পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের মুখে, হাতে সিগারেট ধরিয়ে নাটক, চলচ্চিত্র এবং ওয়েবসিরিজগুলোতে অযাচিতভাবে সিগারেট সেবনের দৃশ্য প্রচার করছে। ‘কাহিনির প্রয়োজনে’র দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের এমন প্রচারণা উঠতি বয়সীদের জন্য নেতিবাচক! ছোট পর্দার নাটক, টেলিফিল্মেও একই দশা। পালে বাতাস দিচ্ছে অভিনেত্রীরা। মেয়েদেরও এখন প্রকাশ্যে সিগারেট সেবন করতে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাশন হিসেবে অসংখ্য তরুণ-তরুণী আজকাল মাদক সেবনের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সুতরাং, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট শিল্পী, প্রযোজক-পরিচালকদের সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা মেগাস্টারদের অনুসরণ করে। তাদের হাতে সিগারেট দেখেই কিশোর-তরুণরা সিগারেট গ্রহণে আগ্রহী হয়। পরবর্তী সময়ে মাদকের দিকে ধাবিত হয়।

ধূর্ততার সীমা লঙ্ঘন করে বর্তমানে নতুন মরণফাঁদ ‘ই-সিগারেট’ বাজারজাত করছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। বিএটিসহ কয়েকটি সিগারেট কোম্পানি দেশে সু-কৌশলে ই-সিগারেট বাজারজাত করতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপপ্রচারে নিরাপদ মনে করে অনেকে ই-সিগারেট সেবনের দিকে ঝুঁকছে। ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গড়ে তোলা হয়েছে শুধু তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য। জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকর! ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ এর শিকার হতে পারেন। তামাক ও মাদকের নেশায় কিশোর-তরুণদের কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে গুটিকয়েক বহুজাতিক কোম্পানির কূটচালের কারণে। এরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ কারণেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর মতো সরকারের শুভ উদ্যোগ বিলম্ব এবং ভেস্তে দিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

বিজয়ের প্রকৃত ফল পেতে হলে কর্মক্ষম মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ের গৌরব সমুন্নত রাখতে হলে তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্যের আগ্রাসন থেকে দূরে রাখতে হবে। বিজয়ের নেপথ্য নায়ক, জাতির বীর সন্তানদের প্রতি এটা আমাদের সকলের দায়বদ্ধতা। সুতরাং, আসুন আমরা সকলে ধর্ম-বর্ণ, দল-জাত, মত নির্বিশেষে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। মহান ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসে এই হোক সবার অঙ্গীকার। 
 

আরবি/এফআই

Link copied!