বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রিয়াজুল হক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম

বিশ্লেষণ

বিদেশি অনুদান: শর্তহীন না শর্তযুক্ত?

রিয়াজুল হক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম

রিয়াজুল হক। ছবি- সংগৃহীত

রিয়াজুল হক। ছবি- সংগৃহীত

বর্তমানে পৃথিবীতে রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির অঙ্গনে ‘বিদেশি অনুদান’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল কিংবা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বিদেশি অনুদান অনেক সময় জীবনরক্ষাকারী পানির মতো হয়ে থাকে। তবে প্রশ্ন একটা রয়েছে, এই অনুদান কি সত্যিই নিঃস্বার্থ? শর্তহীন? নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে থাকে জটিল সব শর্ত ও সুক্ষ্ণ স্বার্থের জাল?

‘অনুদান’ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে আসে, সহযোগিতা, সহানুভূতি বা সাহায্যের কথা। ধারণা করা হয়, ধনী রাষ্ট্র বা দাতা প্রতিষ্ঠান নিঃস্বার্থভাবে দরিদ্র দেশের উন্নয়নের জন্য কিছু অর্থ, খাদ্য বা প্রযুক্তি সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অনুদানের পেছনে থাকে সুক্ষ্ণ কিছু শর্ত, কৌশলগত পরিকল্পনা, এমনকি রাজনৈতিক চাপ।

অনুদানের শর্ত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে-

অর্থনৈতিক শর্ত: কোনো দাতা সংস্থা বা রাষ্ট্র অর্থ দিলে তার শর্ত থাকে, অর্থনীতি মুক্ত বাজারভিত্তিক হতে হবে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতকে বেসরকারিকরণ করতে হবে, ভর্তুকি কমাতে হবে ইত্যাদি।

রাজনৈতিক শর্ত: অনেক সময় অনুদানের শর্ত হিসেবে গণতন্ত্রের চর্চা, মানবাধিকার নিশ্চিত করা, কোনো বিশেষ আন্তর্জাতিক নীতিতে সমর্থন দেওয়া, এমনকি কোনো বিশেষ রাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার কথা বলা হয়।

সামরিক বা কৌশলগত শর্ত: অনেক সময় অনুদানের আড়ালে সামরিক চুক্তি, নিরাপত্তা সংক্রান্ত জোট বা সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের শর্ত রাখা হয়।

সাংস্কৃতিক শর্ত: উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে দাতা দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতি, জীবনধারা, শিক্ষা বা মিডিয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেয়।

যাই হোক, বিদেশি অনুদানের শর্ত সবসময় খারাপ, সেটা বলার সুযোগ নেই। কিছু শর্ত যেমন মানবাধিকার, সুশাসন, দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা ইত্যাদি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হতে পারে।

কিন্তু অন্যদিকে, কিছু শর্ত দেশীয় অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়, স্থানীয় শিল্প-কারখানার উৎপাদন ধ্বংস করে দেয়, রাষ্ট্রের স্বাধীন নীতি গ্রহণের সক্ষমতা খর্ব করে ফেলে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, শর্তহীন অনুদান কি আছে? পৃথিবীতে একেবারে শর্তহীন অনুদান বিরল। কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক শর্তহীনতা দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক বা কৌশলগত সুবিধা আদায়ের উপায় থাকে। তা ছাড়া অনেক অনুদানই আসে প্রকল্প ভিত্তিক, যেখানে দাতা দেশ বা সংস্থার নিজস্ব ঠিকাদার বা পরামর্শক নিয়োগ বাধ্যতামূলক থাকে। ফলে অর্থের বড় অংশ আবার দাতাই নিয়ে যায়।

অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি অনুদান একেবারে এড়িয়ে চলাও সম্ভব নয়। তবে অনুদান গ্রহণের শর্ত, ফলাফল ও ঝুঁকি সম্পর্কে জনসমক্ষে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা থাকতে হবে। একক দাতার ওপর নির্ভর না করে বহুমুখী সম্পর্ক তৈরি করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন। আর আমরা যেন বিকল্প অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারি, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

বিদেশি অনুদান আজকের বিশ্বে এক ধরনের সফট পাওয়ার। এটি শুধু অর্থ নয়, বরং দাতা দেশের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার।

তাই অনুদান নিতে হবে কৌশলগতভাবে, দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। নতুবা উন্নয়নের পরিবর্তে বিদেশি শর্তের শেকলেই বন্দি হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!