বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


দ্য ডিপ্লোম্যাট

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা আধুনিকায়নে ভারত বাধা দেয় কেন?

দ্য ডিপ্লোম্যাট

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের পতাকার কোলাজ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের পতাকার কোলাজ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে, বিশেষ করে বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেই ভারত কৌশলগত, আমলাতান্ত্রিক কিংবা কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই, কেন ভারতের এই নাক গলানো স্বভাব?

এই প্রতিবন্ধকতার পেছনে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত হিসাব-নিকাশ, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ঘাটতি এবং ভারতের ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, বিশেষ করে চীনকে ঘিরে।

চীন ফ্যাক্টর: কৌশলগত শঙ্কা ও প্রভাব বিস্তার

ভারত বরাবরই দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় থাকে। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে। ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে ভারতের সীমান্ত এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন অবস্থান। এসব মিলিয়ে ভারত বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ের অংশ মনে করে। বাংলাদেশে এটি ‘ভারতীয় আধিপত্য’ নামে সমালোচিত।

বাংলাদেশ যখন চীনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বা রাডার প্রযুক্তি সংগ্রহ করে, তখন তা ভারতের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ভারত নিজে কখনোই বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তবধর্মী বিকল্প সরবরাহ করতে পারেনি। ভারতের প্রতিরক্ষা খাত এখনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চীন, রাশিয়া বা পশ্চিমাদের তুলনায় পিছিয়ে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল

২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের পর অন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি ঘটে। চলতি বছর বাংলাদেশ একটি ২১ মিলিয়ন মূল্যের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেছে, যা আগের সরকার রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করেছিল বলে অভিযোগ।

ফলে বাংলাদেশ বিকল্প সন্ধান করতে বাধ্য হয়। এই তালিকায় রয়েছে মূলত চীন ও রাশিয়া। ২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে দুটি মিং-শ্রেণির সাবমেরিন সংগ্রহের পর ভারত বাংলাদেশকে সামরিক নজরে রাখা শুরু করে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল চীনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক (১১ শতাংশ)—যা ঘটেছিল ভারতের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শেখ হাসিনার শাসনামলেই।

ভারতের তৈরি ‘তেজস’ যুদ্ধবিমান কেনার প্রাথমিক আলোচনা হলেও বাংলাদেশ পরে রাশিয়ার ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান ও চীনের জেএফ ১৭-এর দিকেই ঝুঁকে পড়ে। ভারতের অনাগ্রহ ও প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাবের অভাব এর কারণ।

দ্বৈত নীতি ও আঞ্চলিক নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ যখন চীনা ফ্রিগেট, সাবমেরিন বা তুর্কি ড্রোন কিনে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করে, তখন ভারত অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চাপ বা আঞ্চলিক ফোরামে আপত্তি তোলে। ভারতীয় মিডিয়া এসব ক্রয়কে বাংলাদেশের বৈধ নিরাপত্তা চাহিদার অংশ না দেখে ‘চীনা সামরিক প্রভাব বিস্তার’ হিসেবে তুলে ধরে।

অবশ্য এই প্রবণতা উল্টো ফল দিচ্ছে। ভারতের বাধাদানমূলক নীতি যত বাড়ছে, বাংলাদেশ ততটাই চীনের দিকে ঝুঁকছে—যা ভারতীয় কৌশলগত উদ্বেগকে আরও তীব্র করছে।

নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও বিদেশি নির্ভরতা

ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের স্বপ্ন আঞ্চলিক রপ্তানিকারক হওয়া—তারই সীমাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস কিছু দেশীয় অগ্রগতি করলেও ভারতের সামরিক বাহিনী এখনো উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিদেশি সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল। যেমন, এস-৪০০ রাশিয়া থেকে এবং বারাক-৮ ইসরায়েল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা লোন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কঠোর শর্ত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে চীনকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ এখন সামুদ্রিক জলদস্যুতা, মিয়ানমার সীমান্তে গোলাবর্ষণ, আকাশসীমা লঙ্ঘন ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বড় শক্তির প্রতিযোগিতার মুখে। সুতরাং প্রতিরক্ষা আধুনিকায়ন বাংলাদেশের জন্য বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি বিষয়।

সমাধানের পথ: সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তোলা

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা আধুনিকায়ন ভারতের বিরুদ্ধে নয়, বরং বঙ্গোপসাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাড়তে থাকা অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নিজেদের সুরক্ষার জন্য। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’—এই নীতির আওতায় বাংলাদেশ চীন, ভারত, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে।

কিন্তু ভারত যখন সহযোগিতার পরিবর্তে সন্দেহ ও প্রতিরোধমূলক কৌশল অবলম্বন করে তখন বাংলাদেশ বাধ্য হয় বিকল্প উৎসে যেতে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ভারতীয় আধিপত্যের ভয় ও আস্থাহীনতা শুধু সম্পর্ককেই দূর করে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের সম্ভাবনাও ক্ষুণ্ন করে।

করণীয়: দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপ ও যৌথ উদ্যোগ

ভারতের উচিত বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ নয়, অংশীদার হিসেবে দেখা। যৌথভাবে যুদ্ধবিমান, ড্রোন, নজরদারি সিস্টেম তৈরির উদ্যোগ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’—উভয় নীতির সঙ্গে মানানসই হতে পারে।

দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপের মাধ্যমে পারস্পরিক চাহিদা ও উদ্বেগ চিহ্নিত করে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা যেতে পারে। এছাড়া, স্বচ্ছ এবং পারস্পরিক সামরিক বিনিময় ভারতীয় আধিপত্যের অভিযোগ ও আস্থাহীনতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

অন্যথায়, যদি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা স্বায়ত্তশাসনে ভারত বাধা দেওয়ার প্রবণতা চালিয়ে যায়, তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা অংশীদাররা আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠবে—যা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে তুলবে এবং সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসবে অন্য বড় শক্তি ও আঞ্চলিক প্রভাবকরা।

 

বিশ্লেষক

মো. ওবাইদুল্লাহ, গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট, পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগ

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপি

Shera Lather
Link copied!