ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

জিএম কাদেরের বিপরীতে ‘একজোট’ জাপার বহিষ্কৃত নেতারা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন জাপার একদল নেতা। ছবি- সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাপার একদল নেতা। তারা কাদেরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। এ সময় কাদেরের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অব্যাহতিপ্রাপ্ত তিনজন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ বিগত সময়ে বেরিয়ে যাওয়া নেতারাও ছিলেন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) গুলশান-২-এ এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সোমবার (৭ জুলাই) জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে নতুন মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে।

পার্টির প্রেসসচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

প্রথমে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যেই দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং চুন্নুকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়।

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৫ জুনের মতবিনিময় সভায় জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা এই তিন নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনেন এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানান। ২৮ জুন প্রেসিডিয়াম সভায় সেই দাবির প্রেক্ষিতে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা এখন কার্যকর।’

এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে জাপার একদল নেতা অংশ নেন। তারা নানা অভিযোগ এনেছেন পার্টি চেয়ারম্যান কাদেরের বিরুদ্ধে। এমনকি নতুন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগকে অবৈধ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া জাপা চেয়ারম্যান কাদেরে যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। 

শামীমের নিয়োগ অবৈধ দাবি মাহমুদের

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছি, আমাদের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বহাল রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ।’

জিএম কাদের গতকাল (সোমবার) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডিয়ামের সভার যে রেফারেন্স দিয়েছেন সেই বৈঠককেও অস্বীকার করেছেন এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘প্রথমত ওই প্রেসিডিয়ামের সভায় কোরাম হয়নি। আর গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারায় বলা হয়েছে মহাসচিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রেসিডিয়ামের মিটিং আহ্বান করবেন। আলোচ্য সূচি নির্ধারণ করবেন মহাসচিব।’

মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছি। আমরা পার্টির বিরুদ্ধে কী কাজ করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি, ২০ (ক) ধারা বাতিল করতে বলেছি, হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলেছি। আমাদের এসব কাজ কোনোভাবেই দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।’

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দলের সঙ্গে আছেন উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দলের সঙ্গে রয়েছি। আমিও এই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলাম, আমাকে যখন ঘোষণা করা হয়, তখন পার্টির চেয়ারম্যান আমার পাশে বসে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর জিএম কাদের জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন, একজন (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) মৃত্যু পথযাত্রী ছিলেন।’

জিএম কাদেরের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন চুন্নুর

সংবাদ সম্মেলনে ‘জিএম কাদেরের যোগ্যতা নেই’ বলে অভিযোগ করেছেন জাপার সদ্য বহিষ্কৃত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, ‘আমি এমন কী অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ পর্যন্ত অব্যাহতি দিলেন!’

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমাকে পার্টির মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কোনো আপত্তি নেই। আমার একটাই দুঃখ— ৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৮৭ সালে উপমন্ত্রী হয়েছি, তখন থেকে পার্টির সঙ্গে আছি। আমি যখন মন্ত্রী তখন জিএম কাদের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি ১৯৯৬ সালে পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তার কোনো যোগ্যতা নেই, তার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই। তারপরও তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করেছি। ২৮ জন নেতাকে প্রমোশন দিয়েছেন, আমি জানি না।’

কাজী ফিরোজ রশীদের ঐক্যের ডাক

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন পৃথক একটি অংশের নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে অনেক ভালো করতে পারবে। জিএম কাদের একে একে সবাইকে বের করে দিয়েছেন। আমরা সবাই চাই একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান।

উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, ‌মো. হারুন আর রশিদ, ভাইস-চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সম্পাদক শারমিন পারভীন লিজা, ডা. সেলিমা খান, কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান দুলাল, আব্দুস সাত্তার, জিয়া উর রহমান বিপুল, তাসলিমা আকবর রুনা, আলমগীর হোসেন, আমিনুল ইসলাম সেলিম, এস এম হাশেম, সিরাজুল আরিফিন মাসুম, চিসতী খায়রুল আবরার।