বর্ষার বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ যখন কাদা-পানির দুর্ভোগে নাখোশ, তখন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক আবেগঘন দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাগুরায় এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের জন্ম দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বর্ষায় সিক্ত হয়ে ওঠা সড়কের পাশের ফসলি জমিতে আনন্দঘন পরিবেশে গোসল করেছেন তারা।
শিশুর মতো উচ্ছ্বাস, পানিতে গড়াগড়ি আর নির্মল হাসির সে দৃশ্য এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টিতে জমে ওঠা জলাধার বা ধানখেতে গোসল করাটা একসময় গ্রামীণ শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
সেই হারানো ঐতিহ্যকেই যেন জীবন্ত করে তুললেন এনসিপির নেতারা। পরনে সাধারণ পোশাক, মুখে নির্মল হাসি—তারা জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন একে অপরের গায়ে, কেউ হাঁটু পানিতে বসে ছবি তুলছেন।
সড়কের পাশেই ছিল জনসমাগম। পথচারীরা দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করেছেন, অনেকেই ভিডিও করে আপলোড করেছেন সামাজিক মাধ্যমে। মুহূর্তেই ফেসবুক-টিকটক-ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে সেই নির্মল আনন্দের ছবি। নেটিজেনদের মন্তব্য- ‘এ রকম উচ্ছ্বাসে ভরা রাজনীতিকই তো আমাদের দরকার।’

একজন মন্তব্য করেছেন, ‘পদ-পদবি নয়, মানুষ যখন মানুষের মতো আচরণ করে তখন রাজনীতি মানুষের ঘরে ফিরে আসে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘শৈশবের সেই সরলতা আবার ফিরে এলো নেতাদের মধ্যে। দেখে ভালো লাগছে।’
রাজনীতির মাঠে যাদের দেখা যায় সভা-সমাবেশ আর দাবির মিছিলে, তারা যখন সাধারণ মানুষের মতো করে বৃষ্টি উপভোগ করেন, তখন এক মানবিক মুখও দেখা যায়। এনসিপি নেতাকর্মীদের এমন মুহূর্ত সেটিই প্রমাণ করল।
বর্ষার পানিতে ডুবে থাকা এক ফসলি জমির মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদের সেই সরল উল্লাস যেন বলে উঠছে- ‘আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য, কিন্তু আমরাও মানুষ, আমরাও বৃষ্টি ভালোবাসি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, দলটির নেতারা বৃষ্টির পানিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে গোসল করছেন, কেউ আবার জলভরা মাঠে একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন শিশুসুলভ হাসিতে। কেউ অন্যকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন, কেউ সহযোদ্ধাকে মজার ছলে সড়ক থেকে পানিতে ফেলে দেওয়ার জন্য ধাক্কা দিচ্ছেন। এ সময় অন্য সহযোদ্ধারা সেই দৃশ্য ফোনে ভিডিও করছেন।
ভিডিওতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ সইসলাম, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারীসহ অন্য নেতাদের দেখা গেছে। বর্ষার পানিতে যেন তারা ফিরে পেয়েছেন হারানো শৈশব। আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই।
নেটিজেনরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতাদের এমন মানবিক রূপ সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা বাড়ায়। কঠোরতা আর আনুষ্ঠানিকতার বাইরে এসে জীবনকে উদযাপন করাও একধরনের রাজনৈতিক বার্তা—যেখানে সম্পর্ক, আবেগ আর বাস্তবতা মিলেমিশে যায় একসঙ্গে। সামাজিক মাধ্যমে এসব দৃশ্য মুহূর্তেই প্রশংসা কুড়িয়েছে।
পরে তারা জুলাই পদযাত্রার দশম দিনে মাগুরায় যান। বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা।

ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের ভায়না এলাকার ছয় রাস্তার মোড়ে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে দাঁড়িয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের জন্যই আমাদের লড়াই। আমাদের সেই লড়াই কিন্তু শেষ হয়নি। আমরা সেই বার্তা দিতেই এসেছি।’
পদযাত্রায় অংশ নেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ। পদযাত্রা ও পথসভা শেষে নড়াইলের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতারা।
আপনার মতামত লিখুন :