‘জুলাই কারাবন্দীদের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদ। রোববার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ‘ছাত্ররা যখনই আক্রান্ত হয়েছে, তখনই রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করেছে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দিকনির্দেশনা দিয়েছি। ডিবি আমাকে বেশি নির্যাতন করেছে। তারা মনে করেছিল বাড্ডা-রামপুরার আন্দোলনগুলো আমাদের নির্দেশেই হয়েছে এবং আমি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলো করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে আটক করে গাড়িতে মারধর করে ও একটি ছোট রুমে নিয়ে গিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং নানা স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দেওয়া হয়, যেমন—বিএনপির কার কার সঙ্গে যোগাযোগ, কীভাবে মেট্রোরেল পোড়ানো হলো, কারা জড়িত ছিল এসব। বিশেষ করে যেদিন শেখ হাসিনা মেট্রোরেল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সেদিন সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয়। ছাত্রলীগের কোটায় চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভ বেশি ছিল। তারা ডিবি রিমান্ডে আমাকে ফুটবলের মতো মেরেছে। আমার সঙ্গে এমনটা হলে ছাত্রদল বা শিবিরের নেতাদের অবস্থা কেমন হয়েছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।’
নূর বলেন, ‘আমাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার না হলে আগের মতোই প্রশাসনের আচরণ চলবে। তাহলে এত ত্যাগের কী মূল্য থাকবে? শেখ হাসিনার পতনের পথ আমরাই তৈরি করেছি। তিনি আমাদের অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু আমরা আপস করিনি। ২০২১ সালে দল গঠনের সময়ই আমরা বলেছিলাম, এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, একই সঙ্গে সরকারপ্রধান ও দলপ্রধান হওয়া যাবে না এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক সংসদ গঠন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরাই প্রথম বলেছিলাম, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রয়োজন। জামায়াতসহ কয়েকটি দল সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। আমরাও বলছি, যদি নিম্নকক্ষে না হয়, অন্তত উচ্চকক্ষে (পিআর) পদ্ধতি চালু হোক। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের একটি ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। জুলাই জাগ্রত থাকবে। আমরা জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করে যাব।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন না হলে দেশে কোনো গণঅভ্যুত্থান হতো না। সেই সময় যারা আন্দোলন করেছিল, তারাই রাজপথে নেমেছিল। এই অভ্যুত্থান কোনো একক নেতৃত্বে হয়নি। ১৮ কোটি মানুষের অংশগ্রহণে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু এরপরেও কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আসেনি। এক বছরেও মৌলিক সংস্কার হয়নি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজও পুলিশ, সচিবালয়, সরকারের সব দপ্তর ও সেক্টরে আওয়ামী লীগ কায়েম রয়েছে। শুধু হাসিনা দিল্লি চলে গেছেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদী কাঠামো রয়ে গেছে। শেখ পরিবারের কাউকে এক বছরেও ধরা হয়নি, তাহলে গণহত্যার বিচার কীভাবে হবে?’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের বড় সফলতা শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, তাও ভারতে। এই অভ্যুত্থান ২০১৮ সালেই হতে পারত, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছিল না।’
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব এডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী। সঞ্চালনায় ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট খালিদ হাসান।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, আইনজীবী অধিকার পরিষদের নেতা এড. মো. খাদেমুল ইসলাম, এড. মো. মমিনুল ইসলাম, এড. হাবিবুর রহমান, এড. হাবিবুর রহমান হাবিব, এড. মেহেদী হাসান, এড. তানজিল ইসলাম, এড. নুরুল করিম বিপ্লব, এড. সাজেদুল ইসলাম রুবেল, এড. আরিফুল হক তায়েফ, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রোকেয়া জাবেদ মায়া প্রমুখ।