আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ৫ আগস্ট। ঠিক এক বছর আগে এই দিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর তার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয় এবং দলটি কার্যত গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে দলটির ভেতরকার কিছু সূত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-কে জানিয়েছে, বর্তমানে দলটি বহুমুখী সংকটে আছে-বিশেষ করে আর্থিক দুর্নীতি, যোগাযোগে নজরদারি ও নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তিতে ভুগছে।
দলের নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের মূল সাংগঠনিক মাধ্যম। বিভিন্ন গ্রুপে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভার্চ্যুয়াল বৈঠক চলে। কোনো কোনো গ্রুপে সদস্যসংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজারের বেশি।
সূত্র বলছে, এই বৈঠকগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য, বিভাগীয় ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা যুক্ত থাকেন। এমনকি শেখ হাসিনাও মাঝে মাঝে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। তবে বিস্ময়করভাবে, কে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন-তা নির্ধারণে অর্থ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অভিযোগ উঠেছে, তিনি একাধিক টেলিগ্রাম গ্রুপ নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে সেগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন।
তবে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব টেলিগ্রাম গ্রুপে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমর্থকেরা অনুপ্রবেশ করেছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। তারা দাবি করছেন, এদের কেউ কেউ কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করে এবং সেটিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতাদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করে।
এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ধানমন্ডি ৩২-এর মতো নামকরণকৃত গ্রুপেও খোলামেলা সমালোচনার পর গ্রেফতার শুরু হয়। তখনই বুঝি ব্যাপারটা গভীর।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা গোটা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তিনি দলের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনতে চান। তিনি চান না, কর্মীরা কেবল ‘কিবোর্ড যোদ্ধা’ হয়ে থাকুক; বরং মাঠপর্যায়ে সক্রিয় হোক।
তথ্য ফাঁস ও সাইবার ঝুঁকির মুখে বর্তমানে আওয়ামী লীগের টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের সবাইকে VPN ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তারা এখন টেলিগ্রাম কেন্দ্রিক ‘প্রথম ধাপ’ পার করে দ্বিতীয় ধাপে-সরাসরি রাস্তায় নামার কৌশল নিচ্ছে। প্রত্যেক জেলা ও মহানগরে বিভাগীয় সংগঠক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সদস্যদের নিয়ে ‘প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের কাজ শুরু হয়েছে।
দলের এক নেতা বলেন, এক বছর হয়ে গেল। এবার রাস্তায় নামতে হবে। জনগণের অধিকার, দলের অস্তিত্ব রক্ষায় আর ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না।