সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, খায়রুল হকের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও সঠিক বিচার হবে। একই সঙ্গে তিনি এই সাবেক বিচারপতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান, যাতে ভবিষ্যতে কেউ বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার সাহস না পায়।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিলম্বে হলেও এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা চাই, আইনি বিধান অনুযায়ী তার বিচার হোক এবং এমন শাস্তি হোক যাতে কেউ বিচারপতির আসনে বসে আর রাষ্ট্রের ক্ষতি করার সুযোগ না পায়।’
তিনি বলেন, ‘খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে যে রায় দিয়েছিল, সেটিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির মূল কারণ। আর সেই সিদ্ধান্তের ফলেই দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের একজন বড় শত্রু যিনি বিচারপতির পদে থেকে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন, তাকে অবশেষে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। শর্ট রায় আর পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল ফারাক। এই বিচারিক প্রতারণা রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের রায়ের মাধ্যমেই রাজনৈতিক সংকট শুরু হয় এবং জাতি আজও এর ভোগান্তি পোহাচ্ছে। খায়রুল হক এই সংকটের জন্য শতভাগ দায়ী।’
বিচার বিভাগকে জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে খায়রুল হক বিচার বিভাগকে কলুষিত করেছেন। তার শাস্তিই পারে ভবিষ্যতের জন্য বার্তা দিতে।’
এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, শুধু খায়রুল হক নয়, আরও যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
শিশু একাডেমি ভাঙার উদ্যোগের বিরোধিতা
শিশু একাডেমি ভবন ভাঙার উদ্যোগের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কার্জন হলের উল্টো দিকে হাইকোর্টের পাশে শিশু একাডেমির ভবন ভেঙে ফেলার যে পরিকল্পনা চলছে, আমরা তার ঘোর বিরোধিতা করছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটির সারা দেশে শাখা রয়েছে। তাই এটিকে স্থানান্তর করলে জাতি গঠনে বাধা সৃষ্টি হবে বলে আমরা মনে করি।’
নিহত শিক্ষার্থীদের কবর জিয়ারত
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উত্তরার দিয়াবাড়ির তারারটেকের একটি পারিবারিক কবরস্থানে যান। সেখানে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থী আরিয়ান, হুমায়ূরা ও বাপ্পির কবর জিয়ারত করেন তিনি। এ সময় তিনি শহিদ জুনায়েদ ও শারিয়ার নামের আরও দুই শিক্ষার্থীর কবরেও শ্রদ্ধা জানান এবং পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সমাজকল্যাণ বিষয়কসম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর, সদস্য কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।