জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ‘জুলাই সনদ’-এর খসড়ার মূল অঙ্গীকারগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছে বিএনপি। তবে সনদের ভাষা, বাক্যবিন্যাস ও কিছু গঠনমূলক দিক সংশোধনী দেবে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব আগামীকাল (৩০ জুলাই) জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
বুধবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিরতির সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, ‘আমরা সনদে থাকা অঙ্গীকারগুলোতে একমত, কিন্তু কিছু শব্দ, বাক্য ও গঠন নিয়ে সংশোধনী দেওয়া হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ার পর আমাদের সংশোধনী জমা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সনদে নির্ধারিত দুই বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে আমরা একমত। সংবিধান বা আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব প্রতিশ্রুতি কার্যকর করার জন্যই এই কমিশন গঠিত হয়েছে।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০-এর বেশি সুপারিশের মধ্যে প্রায় ৬৫০টি প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন। বাকি প্রস্তাবের ক্ষেত্রে তারা সংশোধনী ও পরামর্শ দিয়েছে।
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের সার্বভৌমত্বকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণই রাষ্ট্রের মালিক এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি সংসদে আইন প্রণয়ন করেন। তাই আইন প্রণেতা শুধু সংসদই হওয়া উচিত, এতে কোনো প্রশ্ন থাকা যায় না।’
নির্বাচন কমিশন বাদে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগবিধি সংবিধানে না রেখে সাধারণ আইনের মাধ্যমে করার পক্ষে বিএনপি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হলে প্রয়োজনে সহজেই সংশোধন আনা যাবে, যা সংবিধানে রাখা কঠিন।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ দরকার, তবে সেটিকে যথাযথ চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের আওতায় রাখতে হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে আগামী নির্বাচনে ৫ শতাংশ (১৫ আসন) সরাসরি নারীদের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ (৩০ আসন) করা হবে বলে জানানো হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নারীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, তবে সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে।’
ন্যায়পাল নিয়োগ ও কার্যক্রম বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ন্যায়পাল কোনো দিন কার্যকর হয়নি। প্রথমে এটি প্রতিষ্ঠিত হোক, তারপর আইন যুগোপযোগী করে তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ন্যায়পালকে শুধুমাত্র তদন্তের ক্ষমতা না দিয়ে তার প্রতিবেদন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইনও তৈরি করতে হবে, না হলে প্রতিষ্ঠানটি কার্যহীন হয়ে পড়বে।’