তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা কোথায়?

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এই সংকটকালেই তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কি না এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা চলছে। তবে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি জানান, দেশে ফেরার বিষয়ে তার ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’ তার এমন মন্তব্যে ফেরার পথে বাধা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্ট প্রকাশের পরই তা ঘিরে দিনভর আলোচনা হয়। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের স্ট্যাটাসেই সব ব্যাখ্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।

অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে লিখেছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরায় সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা বা আপত্তি নেই।

ফেরার পথে বাধা কোথায়

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পার হয়েছে। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে এবং তার আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দায়ের হওয়া সব মামলা থেকে আইনি প্রক্রিয়াতেই অব্যাহতি পেয়েছেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান।

পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিএনপির দিক থেকে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা ও অস্ত্রে লাইসেন্সের আবেদনের খবর এসেছে সংবাদমাধ্যম গুলোতে। ফলে মামলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তার দেশে ফিরতে দৃশ্যত কোনো বাধা ছিল না।

তবে বিএনপির কিছু সূত্র বলছে, তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের আপত্তির বিষয়টি কাজ করে থাকতে পারে। তবে কোন দেশ কেন ও কীভাবে তাদের এই আপত্তির কথা জানিয়েছে তা সূত্রগুলো নিশ্চিত করতে পারেননি।

তিন দিন পর কথা বলেছেন খালেদা জিয়া

বিস্তারিত পড়ুন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ফেসবুকে তারেক রহমান যা বলেছেন তাতে মনে হয় দেশে আসার বিষয়টি তার নিজের ওপর নির্ভর করে না এবং আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে যার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই।

‘উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির বিষয়টি সামনে এসেছিলো এবং যে যা-ই বলুন না কেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন না হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কোন ভরসায়। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটাই নির্ভর করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়ার ওপরে।’

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ১/১১ এর সময়ে কিছু ব্যাপার ছিল। তিনি (তারেক) এক ধরনের মুচলেকা দিয়ে দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়াও বলেছিলেন যে তারেক লন্ডনে পড়ালেখা করবেন, রাজনীতি করবে না। আমরা জানি না সেই অঙ্গীকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কি না। তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েছেন কি-না তাও পরিষ্কার না।

ওদিকে বিবিসি বাংলায় শনিবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশ বড় দুটি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে।

জয়ের এমন মন্তব্য এবং তারেক রহমানের দিক থেকে তার দেশে ফেরা নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বহুল আলোচিত ‘মাইনাস টু ফর্মুলার’ বিষয়টিও অনেকের আলোচনায় আসছে।

হকের পথে চললে বাধা আসবেই : জামায়াত আমির

বিস্তারিত পড়ুন

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য করার কথিত উদ্যোগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে পরিচিত।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, মাইনাস টু নিয়ে যত কথা বলি না কেন... তখন আসলে এজেন্ডা ছিল মাইনাস ফোর। সেটা ছিল দুই পরিবারের ধারাবাহিক শাসনের বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নেওয়া। এর মধ্যে একটা মাইনাস হয়ে গেছে (শেখ হাসিনা পরিবার)। বাকি অর্ধেকের মধ্যে খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয়। ফলে বাকি থাকলেন তারেক রহমান। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার অনিশ্চয়তা শেষ পর্যন্ত মাইনাস ফোর-এ গড়ায় কি-না সেটি সময়েই জানা যাবে।

তবে বিএনপি কয়েকজন নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে নির্বাচনের তফসিল হলে পরিস্থিতি যেমনই হোক দেশে ফিরবেন মি. রহমান এবং তিনিই নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেবেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা