জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি—যেটি জুলাই-এর প্রেক্ষাপট, সনদ, শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার-নিরাপত্তার কথা বলবে। জুলাই সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, আজ ঝিনাইদহবাসীর কাছ থেকে অভূতপূর্ব ভালোবাসা পেয়েছি। জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।
বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বরে আয়োজিত জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
এ সময় তিনি জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের প্রতি সম্মান ও সমবেদনা জানান। তিনি দ্রুত জুলাই সনদ তৈরির দাবি জানান।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে সীমান্তে একজন কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী বাহিনী নয়, একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা শুধু খুন করতে চায়, খুন করাই যেন তাদের নেশা। বিএসএফ একটি মানবতাবিরোধী বাহিনী।’
‘আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না। ভারত সরকারকে বলতে চাই—বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মর্যাদাশীল আচরণ করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঝিনাইদহের সন্তান তারেক রেজা ঢাকায় প্রথম ছয় শহীদের জানাজা পড়িয়েছিলেন। আমরা তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম।’ তিনি ঝিনাইদহবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আপনাদের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আপনারা এনসিপির সঙ্গে থাকুন।’
এনসিপি আপনাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে, এনসিপি জনগণের রাজনীতি করবে এবং সবসময় জনগণের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করে মাত্র দেড় মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘২৪-এ আমরা একটি খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু তাদের শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এমন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে ধর্মের নামে কোনো হানাহানি বা শত্রুতা থাকবে না।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা বলেন, ‘স্বৈরচারী, পাগল, খুনি হাসিনা জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার প্রমাণ ইতিমধ্যেই বিবিসি পেয়েছে। ফলে খুনি শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা কোটা সংস্কারের জন্য মাঠে নেমেছিলাম, যার পথ ধরে আজ স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের কথা বললে একটি দল এমনভাবে আচরণ করে, যেন কিছুই বোঝে না। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’ এ সময় তিনি ঝিনাইদহবাসীর দোয়া, সমর্থন ও পরামর্শ চান।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা দেখছি, একটি দল আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা সংস্কার চায় না, তারা শুধু নির্বাচন চায়। আমরা বিচার এবং সংস্কার করে নির্বাচন চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। একটি দল বলছে, নির্বাচিত হয়ে এসে সংস্কার ও বিচার করব। এর কোনো নিশ্চয়তা কোথায়? সংস্কার দ্রুত করুন—না হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা, জুলাই আন্দোলনের দায় আপনাদেরও নিতে হবে। সব পুলিশ খারাপ না। অনেকের ভাইও পুলিশে চাকরি করে। যারা আওয়ামী লীগের পুলিশ ছিলেন, ছাত্র-জনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের জুলাই হত্যার দায় নিতে হবে ‘
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘অনেকে বেতন পান না। অনেককে ৫-১০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে বুম ধরিয়ে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়। আমরা আপনাদের মুক্তির কথা বলছি। আপনারা আর কারও কাছে বিক্রি হবেন না। আপনাদের কথা বলতে হবে—যেভাবে জুলাই আন্দোলনে বলেছিলেন। আমরা আপনাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রিয় ঝিনাইদহবাসী, আপনাদের সন্তান তারেক রেজাকে আপনাদের হাতে দিয়ে যাচ্ছি। তার হাতকে শক্তিশালী করুন। প্রিয় তরুণসমাজ, আমরা দুর্নীতি চাই না। আমরা চাই একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ।’
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াই, তখন জুলাই আন্দোলনে ফিরে যাই।’ এ সময় তার শ্লোগানে সভাস্থল ও আশপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সভায় বক্তব্য দেন শহীদ প্রকৌশলী রাকিব হোসেনের মা ও শহীদ সাব্বিরের বাবা।
মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, ‘আমরা রক্তের বিনিময়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। কিন্তু এখনও হত্যার বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি। জুলাই সনদ তৈরি হয়নি। আমরা সংস্কার চাই, হত্যাকারীদের বিচার চাই, জুলাই সনদ চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশকে ভয় পাই না, সেনাবাহিনীকে ভয় পাই না। আমরা জনতার ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ঝিনাইদহবাসী তা প্রমাণ করেছে। আমরা সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কাছে মাথা নত করতে চাই না। আমাদের শক্তি সততা।’
এর আগে বিকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দলটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ শহরের জোহান পার্কে আসে। সেখানে তারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিকেল ৬টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ নেতাদের শুভেচ্ছা জানান।
পদযাত্রা শহরের পায়রা চত্বরে এসে শেষ হয়। মাগরিবের নামাজের পর শুরু হয় পথসভা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষের উপস্থিতিতে লোকারণ্য হয়ে ওঠে সভাস্থল।
আপনার মতামত লিখুন :