বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) চূড়ান্ত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত বা শুল্কহ্রাসকৃত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে, যা অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে।
আগামী ডিসেম্বর মাসে জাপানের রাজধানী টোকিওতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের সাথে এ-সংক্রান্ত আলোচনা জাপানের আগে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। তবে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলমান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ২৬ জুন দুই দেশের মধ্যে খাতভিত্তিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। ২১টি ওয়ার্কিং গ্রুপ ৫৫টি সেশনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবাভিত্তিক আলোচনার কাজ শেষ করেছে। জাপান পুরো প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষকে একাধিক ক্ষেত্রে ছাড়ও দিয়েছে। এটি স্পষ্ট করেছে যে, দেশটি এই চুক্তিতে আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর আগে পঞ্চম দফা আলোচনা জাপানে ২০ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হলেও জাপানে বাণিজ্য বাধার মধ্যে পড়বে না। পাশাপাশি অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ চুক্তি নিঃসন্দেহে দেশের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে, যেখানে রপ্তানি ও বিনিয়োগ একসঙ্গে প্রবাহিত হবে। জাপানের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তির সঙ্গে সমতাভিত্তিক চুক্তি ভবিষ্যৎ অংশীদারত্বের পথকে সুগম করবে, যা মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে বাংলাদেশের যাত্রায় একটি বড় ভিত্তি গড়ে দেবে।
প্রথম মুক্তবাণিজ্য চুক্তি: কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বড় অগ্রগতি
এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এটি কেবল দুই দেশের মধ্যকার শুল্ক হ্রাস বা বাণিজ্য সুবিধা নয়, বরং তা হবে একটি সমন্বিত অংশীদারত্ব, যেখানে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ তৈরি হবে।
ইপিএ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের জাপান বাজারে প্রবেশ সহজ হবে। জাপান থেকে বাংলাদেশে আসা প্রযুক্তিপণ্য ও যন্ত্রাংশও সুলভ হবে, যা স্থানীয় উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়ক হবে।
দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক
বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাপানে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, আর আমদানি করে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। রপ্তানির প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল পণ্য।
অন্যদিকে, জাপান বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) অন্যতম বড় অংশীদার। বর্তমানে ৩৫০টিরও বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে, যার মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে ইপিজেডে (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল)। জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ হচ্ছে মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইপিএ কার্যকর হলে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইপিএর সম্ভাব্য সুফল
এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আসবে এবং স্থানীয় শিল্প খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়ে পণ্যের মূল্যহ্রাস এবং মানোন্নয়নও সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের সঙ্গে এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত মজবুত করবে। এটি ভারত ও চীনের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা: ভারত পিছিয়ে, আরসিইপি যোগদানে অগ্রগতি
বাংলাদেশ এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় রয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে বহুদিন ধরে আলোচনা চললেও তা এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এমনকি ভারত একসময় বাংলাদেশের আঞ্চলিক অংশগ্রহণÑ বিশেষ করে আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে (আরসিইপি) যোগ দিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। তবে বাংলাদেশ এখন সেই বাধা অতিক্রম করে রিসিপে যোগদানের বিষয়ে সক্রিয়ভাবে আলোচনা করছে।
উল্লেখ্য, আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি) হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন (আসিয়ান) এবং এর এফটিএ অংশীদারদের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)। এটি ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি প্রাথমিক অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য কার্যকর হয়। আরসিইপি হলো জিডিপি, জনসংখ্যা এবং মোট রপ্তানিমূল্যের সম্মিলিত দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্তবাণিজ্য চুক্তি।
এলডিসি থেকে বের হওয়া
জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে উন্নত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর পাবে না। ফলে বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন দেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ), মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) করার নীতি গ্রহণ করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৪টি দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) সম্পাদনে নোগোসিয়েশন বা আলোচনা প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাপান একটি।
যৌথ স্টাডি গ্রুপের রিপোর্ট
জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর সামনে রেখে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের যৌথ স্টাডি গ্রুপের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য, শুল্ক পদ্ধতি, বাণিজ্য সহজীকরণ, বিনিয়োগ, ইলেকট্রনিক বাণিজ্যসহ ১৭টি খাতের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে চিহ্নিত খাতগুলো হচ্ছে- পণ্যের বাণিজ্য, বাণিজ্য সহজীকরণ, বাণিজ্যে বাধা দূর করার ব্যবস্থা, শুল্ক পদ্ধতি এবং বাণিজ্যসুবিধা (সিপিটিএফ), বাণিজ্যে প্রযুক্তিগত বাধা (টিবিটি), পরিষেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ইলেকট্রনিক বাণিজ্য, সরকারি কেনাকাটা, মেধাস্বত্ব, প্রতিযোগিতা/ভর্তুকি/রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ, কাস্টমস প্রসিডিউর ও ট্রেড ফেসিলিটেশন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ব্যবসা, পরিবেশের উন্নতি, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি, শ্রম, পরিবেশ, স্বচ্ছতা, সহযোগিতা এবং বিরোধ নিষ্পত্তি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আশার কথা হলো, ‘মুক্ত বাণিজ্য’ বিষয়ে আমাদের দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িতরা ভালো ধারণা রাখেন। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) স্বাক্ষর করা সদস্য দেশগুলোর একটি বাণিজ্য ব্লকে অন্তর্ভুক্তকৃত এলাকা হলো মুক্ত বাণিজ্য এলাকা। বাণিজ্যে বাধা, আমদানি কোটা, শুল্ক কমাতে এবং একে অন্যের সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এ ধরনের চুক্তিতে অন্তত দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিকভাবে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য করার পরিকল্পনা নেওয়া এবং তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উভয় দেশ লাভবান হয়।
পেছনের কথা
২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার নয়াদিল্লি সফরের পর মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং ঢাকার উত্তরে ছোট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাংলাদেশকে ১১২ কোটি ডলার নতুন ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। মহাসড়কসহ ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শত শত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়নে অর্থায়ন করছে জাইকা। মাতারবাড়ী প্রকল্পের আওতায় আছে খননের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম গভীর নৌবন্দর নির্মাণ এবং কক্সবাজারে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প পার্ক নির্মাণ।
সেখান থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার রাস্তা উন্নত হলে ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য থেকে পণ্য পরিবহন সহজতর হবে। সুমিটোমো করপোরেশন, তোশিবা ও আইএইচআই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে।
পরে এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকের জন্য জাপানে যান। তখন এক যৌথ বিবৃতিতে ২০১৪ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত অংশীদারত্বকে পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ এবং এর আশপাশের অঞ্চলের উন্নয়নে ‘স্বচ্ছ ও ন্যায্য’ অর্থায়নের মাধ্যমে উচ্চমানের অবকাঠামো নির্মাণের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ক্ষেত্রে লজিস্টিক, জ্বালানি ও শিল্পের দিকগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।
২০২২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট উদ্যোগের অধীনে অগ্রগতি এবং বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬-এর উদ্বোধনে উভয় রাষ্ট্রপ্রধানই তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ নির্মাণে সহযোগিতা করেছিল জাইকা। জাপান বাংলাদেশকে সাইবার সিকিউরিটিতে তার দক্ষতাও দেবে।
২২ জানুয়ারি ঢাকা সফরকালে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা বলেন, জাপান পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করতে চায়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় অনুকূল শুল্কব্যবস্থা চালু হয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে বৃহত্তম দাতা দেশ ছিল। কিন্তু জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০১৪ সালে এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চাতায় নিয়ে যান। উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাও তার সৃষ্টি।
সে বছরের মে মাসে টোকিওতে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ বৈঠকে জাপান-বাংলাদেশ সমন্বিত অংশীদারত্বের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিল। বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট নির্মাণসহ ভবিষ্যৎ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে জাইকার প্রেসিডেন্ট এরপর জুন মাসে বাংলাদেশ সফর করেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, উন্নয়ন সহায়তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শিনজো আবে বাংলাদেশ সফর করেন। টেক্সটাইলের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং উৎপাদন মূল্যশৃঙ্খলে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বন্দর ও পানি নিয়ন্ত্রণ সুবিধা, সড়ক, রেলপথ, সেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা প্রচার করছে। বৈদেশিক সাহায্য অব্যাহত রেখে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং আরও অবকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল জাপান।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশ। রপ্তানির চেয়ে আমদানি প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের মাঝারি আকারের বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে জাপান। তবে অবকাঠামো, নকশা ও নির্মাণ পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে জাপানই বাংলাদেশের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ।
জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে পারে। পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর সুযোগও দেয়। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জাপানের সঙ্গে এই ভারসাম্যমূলক চুক্তি বাংলাদেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আপনার মতামত লিখুন :