হাঙ্গেরির জনগণ নিজেদেরকে ‘মজর’ (Magyar) নামে ডাকে। মজরেরা ছিল এশিয়া থেকে আগত যাযাবর গোষ্ঠী। ৯ম শতাব্দীর শেষভাগে আরপাদের নেতৃত্বে মজরেরা দানিউব ও তিসা নদীর মধ্যবর্তী সমভূমি জয় করে, যা বর্তমান হাঙ্গেরীয় সমভূমির মধ্যভাগ। চাকরি বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য এখন অনেক মানুষই বিদেশে পাড়ি জমায়। বিদেশ যাওয়ার আগে ভেবে চিন্তে যেতে হবে, কোন দেশে কি সুবিধা সব কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এই সুবিধা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়, যখন একাধিক দেশে ভ্রমণের সুযোগ থাকে। গত কয়েক বছরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অফুরন্ত সম্ভাবনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশটি।
হাঙ্গেরিতে জীবনযাত্রার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা
আবাসন, খাবার, পরিবহনসহ জীবনযাত্রার যাবতীয় খরচের ক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় হাঙ্গেরি অনেকটাই সাশ্রয়ী। রাজধানী বুদাপেস্টে মাসিক খরচ হতে পারে সর্বোচ ৬০০ ইউরো, যা অন্যান্য ছোট শহরগুলোয় সর্বোচ্চ ৫০০ ইউরো পর্যন্ত উঠতে পারে।
বাড়িভাড়া বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে সেজেড শহরে খরচ হতে পারে ৩৩০- ৪৪০ ইউরো এবং মিশকল্টস-এ ২৮০-৩৮০ ইউরো। ডেব্রেসেন ও পেচ-এর ক্ষেত্রে এই পরিমাণটি প্রায় একই; ৩০০-৪০০ ইউরো।
বাড়িভাড়ার খাতে গরপড়তায় প্রতিবছর খরচ হয় প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার ইউরো। এ ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো, যেখানে মাসিক ভাড়া ১০০ ইউরোরও (প্রায় ১২ হাজার ৭১৫ টাকা) কম।
হাঙ্গেরি সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন খরচ জোগাতে পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা খণ্ডকালীন চাকরি করার অনুমতি দেয়। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা দৈনিক ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া সপ্তাহান্তে বা বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোয় কর্মঘণ্টার কোনো ধরাবাধা হিসাব নেই।
তাই এ সময়গুলোয় তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেন। সব মিলিয়ে মাসে ৩০০ থেকে ৭০০ ইউরো চলে আসে, যা জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য যথেষ্ট।
শিক্ষার্থীদের আরও একটি বড় সুবিধা হচ্ছে স্টুডেন্ট কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও কেনাকাটায় অনেক ছাড় পাওয়া যায়। তা ছাড়া পাবলিক পরিবহনগুলো এমনিতেই অত্যন্ত সস্তা। এর ওপর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভাড়া আরও কমে আসে।
চাকরি ও স্থায়ী বসবাসের সম্ভাবনা কেমন
হাঙ্গেরিতে কমপক্ষে টানা তিন বছর বৈধভাবে অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা স্থায়ী হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। অবশ্য এর মধ্যে প্রার্থী একটানা সর্বোচ্চ ৪ মাস বা ২৭০ দিনের বেশি হাঙ্গেরির বাইরে থাকতে পারবেন না। এ অনুমতিকে ন্যাশনাল পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট বা এনপিআরপি বলা হয়।
সদ্য পাস করা স্নাতকদের জন্য হাঙ্গেরিতে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপায় হচ্ছে ‘স্টাডি-টু-ওয়ার্ক’ পারমিট। এ অনুমতি শিক্ষার্থীকে স্নাতক শেষ করার পরে হাঙ্গেরিতে আরও ৯ মাস থাকতে দেয়। এর মধ্যে তাকে একটি চাকরি খুঁজে নিতে বা একটি ব্যবসা শুরু করতে হয়।
এই পারমিটের জন্য হাঙ্গেরিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য স্নাতক করা যেকোনো বিদেশি শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারেন। তবে তাকে অবশ্যই তার স্টুডেন্ট রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে এই আবেদন করতে হবে।
‘স্টাডি-টু-ওয়ার্ক’ পারমিট কর্তৃপক্ষ যা খতিয়ে দেখে-
- হাঙ্গেরিতে থাকার জন্য প্রার্থীর কাছে যথেষ্ট তহবিল আছে কি না
- প্রার্থীর বৈধ স্বাস্থ্যবিমা আছে কি না
- হাঙ্গেরিতে প্রার্থীর বসবাসের কোনো আশ্রয় আছে কি না
- কোনো কারণে আবেদন গ্রহণ না হলে হাঙ্গেরি ছেড়ে যাওয়ার উপায় আছে কি না
শুধু তাই নয়, যদি হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব কেউ পেয়ে পান, তাহলে সেই ডকুমেন্টসে ফ্রান্স, পর্তুগাল, ইতালি গিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় বসবাসের সুযোগ মেলে।সর্বসাকুল্যে হাঙ্গেরিতে স্থায়ী হতে হলে ডিগ্রি শেষে আয়ের বৈধ ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। তবে সেটি ডিগ্রির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সেখানে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে কাজের অবারিত সুযোগ। তবে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের চাকরিগুলোয় ভালো বেতন ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা ও এডুকেশন সেক্টরে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়। এ ছাড়া পর্যটন, বাণিজ্য ও বিপণন খাতে প্রতিনিয়ত প্রচুর ভ্যাকান্সি থাকে। 
 

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন