পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)-এর শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম।
শনিবার (২১ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে বর্বর পুলিশি হামলার এক ‘ন্যাক্কারজনক উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
সাদিক কায়েম লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে উৎখাতের লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্ভীকভাবে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। জুলাই আন্দোলন এরই মধ্যে নতুন মোড় ও নতুন গন্তব্য তৈরি করেছে। কিন্তু আন্দোলনের মুখ্য অংশগ্রহণকারী লাবিব মুহান্নাদসহ জুলাইয়ের বহু সহযোদ্ধা পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে এই হামলার সঙ্গে জড়িত পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে অবৈধ বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে, উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে শনিবার (২১ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর নতুনবাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।
এই কর্মসূচিতে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের নেতাকর্মীরাও।
সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, আজকের মধ্যে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামীকাল রোববার (২২ জুন) রাজধানীজুড়ে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করা হবে।
দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে টানা প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ধরে কুড়িল থেকে বাড্ডা ও গুলশানমুখী প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ভাটারা থানা পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশ অ্যাকশনে গেলেও শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। কিছু সময়ের জন্য আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও আবারও তারা রাস্তা অবরোধ করেন।
পুলিশের অ্যাকশনের পর ফের অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন দাবি না মানা পর্যন্ত নতুনবাজারের রাস্তা ছাড়বেন না তারা। শুধু তাই নয়, আজকের মধ্যে দাবি মানা না হলে আগামীকাল রোববার পুরো ঢাকা ব্লকেড করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করছেন তারা।
এদিকে, পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়কে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন,‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তারা দোষীদের শাস্তির দাবি তোলেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলেও জানান তারা।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ইউআইইউ রিফর্ম আন্দোলনে অংশগ্রহণের জেরে গত ২৬ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা ও গড়িমসিতে তারা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দুই মাসের বেশি সময় ধরে নানা চেষ্টার পরও কোনো কার্যকর সমাধান না আসায় শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন।’
আন্দোলনকারীদের অন্যতম লাবিব মুহান্নাদ জানান, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ২৫ জন শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইউনাইটেড গ্রুপ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখত, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলেই তাদের ওপর দমন-পীড়ন নেমে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল শিক্ষার পরিবেশের উন্নয়ন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা। এ দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরও শিক্ষার্থীদের আট মাস ধরে অপেক্ষায় রেখে অবশেষে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ প্রশাসনিক জবাবদিহিতা চাই।’