বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ১২:১২ এএম

অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট

স্বরাষ্ট্রের সেই পঞ্চপাণ্ডব ধরাছোঁয়ার বাইরে

মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ১২:১২ এএম

স্বরাষ্ট্রের সেই পঞ্চপাণ্ডব ধরাছোঁয়ার বাইরে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: ‘একটি গুলি ছোড়ার পর আন্দোলনকারীরা পিছু হটে না। একজন পড়ে যায়, বাকিরা আরও এগিয়ে আসে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের এমন চেষ্টা কেন ব্যর্থ হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণে যাত্রাবাড়ীর রণক্ষেত্রে গিয়ে খোদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসির কাছ থেকে শুনছিলেন এমন বক্তব্য। ছাত্র-জনতা হত্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নগ্ন নির্দেশনা ছিল সাবেক এই মন্ত্রীর।

মন্ত্রণালয়ের সব অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। লুটপাট সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন মন্ত্রীর সাবেক পিএস (একান্ত সচিব) হারুন উর রশিদ বিশ্বাস, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, সাবেক এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) মনির হোসেন ও সাবেক পিআরও (তথ্য কর্মকর্তা) শরীফ মাহমুদ অপু।

মন্ত্রী কামালের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দুর্নীতি ও লুটপাটের সিন্ডিকেটদের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন সহকর্মীরা। দুর্নীতি আর লুটপাটে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া এই পঞ্চপাণ্ডবের বরপুত্ররা এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও এদের কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন ভারতে। কেউ আবার দেশেই আছেন আত্মগোপনে। সুরক্ষিত রয়েছে তাদের সম্পদও। ঢিমেতালে চলছে তদন্ত। তাই দুদককে আরও সক্রিয় ও কঠোর হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা। 

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান আলোচিত পঞ্চপাণ্ডবের প্রধান আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার সাবেক পিএস হারুন উর রশিদ বিশ্বাস অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। তবে পটপরিবর্তনের পর অবসরে পাঠানো হয় তাকে। সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বদলি করা হয় পাট মন্ত্রণালয়ের রেশমশিল্পে। নতুন কর্মস্থলে তিনি যোগদান করেননি বলে রেশমশিল্প থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় কামালের এপিএস হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মনির হোসেনকে ৫ আগস্টের পর থেকে কোথাও দেখা যায়নি। আর পিআরও শরীফ মাহমুদ অপুকে বেতারে ফেরত পাঠানো হয়। পরে অবশ্য তাকে চট্টগ্রাম বেতারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মন্ত্রীসহ আলোচিত-সমালোচিত এই কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। দুর্নীতি, অনিয়ম আর লুটপাটে গা ভাসিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে পঞ্চপাণ্ডবের নেতৃত্ব দিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল গড়েছেন অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। বাবার ক্ষমতার ব্যবহার করে ছেলে সাফি মুদাচ্ছির খান জ্যোতিও হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পুরোনো ভবন কিনে সংস্কার করে বিক্রির ব্যবসায় লগ্নি করেছেন অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। পঞ্চপাণ্ডবের হারুন উর রশিদ বিশ্বাস, ধনঞ্জয় কুমার দাস, মনির হোসেন ও শরীফ মাহমুদ অপু ফুলেফেঁপে হয়েছেন বটবৃক্ষ। দেশে-বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। অবৈধ অর্থের ভারে এখনো হাঁটতেই পারেন না একসময়ের ক্ষমতাধর হারুন উর রশিদ বিশ্বাস ও শরীফ মাহমুদ অপু।

আসাদুজ্জামান খান কামাল : সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হাতিরঝিল-তেজগাঁও নির্বাচনী এলাকা থেকে বিনা ভোটের নির্বাচনে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকায় তার তেমন জনপ্রিয়তা না থাকলেও শেখ কামালের বন্ধু হিসেবে ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে মন্ত্রী ছিলেন টানা ৯ বছর। ৪ আগস্ট গভীর রাত পর্যন্ত ছিলেন মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে। সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দুবাইয়ে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসায় রয়েছে অর্থলগ্নী। এ ছাড়া ঢাকার তেজগাঁও ছাড়া দাউদকান্দি ও কুমিল্লায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তার শ্যালক লতিফ ভূঁইয়া দুলাভাইয়ের ক্ষমতায় হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে লুটপাট আর অবৈধ আয়ে হাতে হাত ধরে এগিয়েছেন ঢাকা থেকে কুমিল্লায়। লতিফ ভূঁইয়া নিজেও সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ধানমন্ডি, বরুড়া ও মনোহরপুরে। তদন্তে নামা দুদকের কর্মকর্তারাও শালা-দুলাভাইয়ের অবৈধ সম্পদের তালিকা তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ঢাকা ও কুমিল্লায় অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, আসাদুজ্জামান খান কামাল, লতিফ ভূঁইয়া কামালসহ তাদের পরিবারের অবৈধ আয়ের মূল উৎস্যই ছিল পুলিশে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি, ফায়ার সার্ভিস ও জেল পুলিশে নিয়োগ, অস্ত্র ও মদের বারের লাইসেন্স, নতুন গাড়ি আমদানি, দখল বাণিজ্য, নির্মাণকাজের ঠিকাদারি, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন বস্তায় ভরে টাকা যেত কামালের ধানমন্ডির বাসায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তার পরিবারের ৩২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া কয়েক হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসীর বাণিজ্যে অর্থলগ্নীর অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান কামালের পুত্র কারাগারে থাকা সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি ও শ্যালক লতিফ ভূঁইয়া কামালের বিরুদ্ধে। দুদকে দায়ের করা অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে ‘সিন্ডিকেট’ করে ‘বস্তায় বস্তায়’ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসাদুজ্জামান ও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান এবং তাদের ছেলেমেয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসপি বদলিতে এক বছরের জন্য ১ কোটি টাকা, স্থানভেদে ২ থেকে ৩ কোটি টাকাও দিতে হতো। এর মিডিয়া করতেন এপিএস মনির হোসেন ও শরীফ মাহামুদ অপু। ঘুষের এই টাকা রাতে ধানমন্ডির বাসায় আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ১০ বছরে পুলিশের এসপি, ওসি ও এসআই বদলি, পদায়ন ও নিয়োগে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এর পাশাপাশি তিনি পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দিয়ে ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন শতকোটি টাকা।

হারুন উর রশিদ বিশ্বাস: সরকারের পতনের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব থেকে ধাপে ধাপে অতিরিক্ত সচিব হন হারুন উর রশিদ বিশ্বাস। তবে সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একান্ত সচিব (পিএস)।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। পিএস পদ নামের ‘পরশ পাথরে’ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিয়োগ-বাণিজ্য, জমি দখল, লুটপাট ও প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে গড়েছেন শত কোটি টাকার সম্পদ। অবৈধ সেই সম্পদের পাহাড়ের সন্ধানে হারুন-অর রশিদ বিশ্বাস, তার স্ত্রী ওয়াহিবা আক্তার ও মেয়ে দোয়া বিনতে রশীদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অন্তত ৯৯টি প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

ঢাকার কল্যাণপুরে হারুন বিশ্বাসের নিজের নামে চারটি ফ্ল্যাট ও ঢাকার সাগুফতায় রয়েছে ২০ কাঠা জমি। হারুন বিশ্বাস ও মন্টু বিশ্বাস প্যাদারহাট ওয়াহেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি এবং নিয়োগ-বাণিজ্য করে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মন্টু বিশ্বাস দক্ষিণ কাজীরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে মুলাদি থানার ৭ নম্বর কাজীরচর ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বিঘা জমি কেনেন। মন্টু বিশ্বাসের মাছের ঘের ও গরুর খামার আছে। 

এমনকি সরকারি খাল দখল করে ১৫ একর জমির ওপর গড়েছেন মাছের ঘের। গত সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সই করা তলবি চিঠিতে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র, জমি, ফ্ল্যাট ও শেয়ারসহ বিভিন্ন নথিপত্র তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ধনঞ্জয় কুমার দাস : পতিত সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচিত পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম হোতা ছিলেন ধনঞ্জয় কুমার দাস। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব হিসেবে যোগ দেন তিনি। সরকারের অনুমোদনের পর দেশজুড়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির অর্ডার হতো তার স্বাক্ষরে। টানা প্রায় পাঁচ বছর ছিলেন এই দায়িত্বে। 

সোনার হাঁসের ডিম দেওয়ার মতো পদটিতে যোগ দিয়ে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই স্বল্প সময়েই তিনি হয়েছেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক। তবে তার এই অবৈধ আয়ের সামান্য অংশ রেখেছেন দেশে। বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া ও ভারতে। এসবের কারণে ধনঞ্জয়কে পুলিশে বদলি বাণিজ্যের ‘মহারাজা’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন ব্যাচমেট ও অন্য পেশার বন্ধুরা।

আলোচিত কর্মকর্তা ধনঞ্জয় কুমার দাস ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব হিসেবে যোগদান করেন। টানা চার বছর আট মাস পর ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়। তবে সেই সোনর ডিমের তাড়নায় মাত্র তিন মাসেই ২০২৩ সালের ২০ মার্চ ফিরে আসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে। এ সময় তাকে যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই পদে থেকেও অধস্তনদের দিয়ে চালাতেন বদলি বাণিজ্য। নতুন করে ফিরে আসার পর ৫ আগস্ট পর্যন্ত, অর্থাৎ আরও এক বছর চার মাস সোনার ডিম ধরার সব প্রক্রিয়া চলমান রাখেন ধনঞ্জয়। তবে এতে ছন্দপতন হয় সরকারের পতনে।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ধনঞ্জয় কুমার দাস থাকতেন জগন্নাথ হলে। পদ-পদবি না থাকলেও সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। লক্ষ্মীপুরে জন্ম নেওয়া এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তার অবৈধ আয়ের সামান্য অংশ রেখেছেন দেশে। বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া ও ভারতে। দেশে রাখা সামান্য অংশে রয়েছে একাধিক বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়িসহ বিপুল সম্পদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ধনঞ্জয় কুমার দাস পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। লেনদেনে অমিল হলেই প্রত্যাহার হতেন, পদায়িত হতেন নতুন কর্মকর্তা। সবকিছুই করতেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুমোদনে। অবশ্য প্রত্যাহার ও নতুন পদায়নের অনুমোদন নিতে ধনঞ্জয়কে খুব একটা বেগ পেতে হতো না।

শরীফ মাহামুদ অপু : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা (পিআরও) ছিলেন শরীফ মাহামুদ অপু। পুলিশে বদলি-বাণিজ্যের অন্যতম এই বরপুত্রও ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের সদস্য। বদলি বাণিজ্যের ঘুষের টাকার একটি অংশ নিজে রেখে বাকিটা রাতে ধানমন্ডির বাসায় মন্ত্রীর ছেলের হাতে বুঝিয়ে দিতেন তিনি। এভাবেই আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশ বেতারের ২৮ ব্যাচের (অনুষ্ঠান) এই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া শরীফ মাহামুদ অপু বেতারের চাকরিতে যোগদানের পরেও টানাটানির মধ্য দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছিলেন জীবনযাপন। তবে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে পুরোপুরি বদলে ফেলেন নিজেকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দারিদ্র্যও আর স্পর্শ করতে পারেনি। শরীফ মাহামুদ অপু তেজগাঁও-হাতিরঝিল থেকে নির্বাচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রায় ১০ বছরের তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন।

অবৈধ আয়ের অর্থে বাড়ি, গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট এমনকি ব্যাংককের পাতায়ায় রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন। রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা ও গুলশানে বেশ কয়েকটি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছেন অপু। নিজের ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে রয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পুলিশের এসপি, ওসি ও এসআই বদলির পাশাপাশি তিনি অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে অপু নিজের এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য নিয়েছেন ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। এসব টাকার বড় একটি অংশ দিতে হতো কামালের ছেলে অথবা তার স্ত্রীর কাছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পালিয়ে যাওয়ার পরও জোর করে অর্থ কামাইয়ের এই মন্ত্রণালয়ে থাকতে চেয়েছিলেন শরীফ মাহামুদ অপু। নতুন পিআরও নিয়োগের পরও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার পাশাপাশি নির্ধারিত কক্ষেও প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সিপাহ সালার শরীফ মাহামুদ অপুর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দাখিলের পর তাকে ডাকা হয়েছিল। দুদকে হাজিরাও দিয়েছেন তিনি। তার অর্থ-সম্পদের হিসাবও জমা দিয়েছেন অপু। তবে এসবের তথ্য নিয়ে শিগগিরই অনুসন্ধানে নামবে সংস্থাটি।

মনির হোসেন : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ লুটপাট আর দুর্নীতির সাইলেন্ট কিলার ছিলেন ভারতে পালাতক আসাদুজ্জামান খান কামালের সাবেক এপিএস মনির হোসেন। ব্যক্তিগত সহকারী (পিও) থেকে পদ বাগিয়ে হয়েছিলেন এপিএস। সব অবৈধ আয়ের ভাগ পেতেন মন্ত্রণালয়ে তার দপ্তরে বসেই। কথা বলতেন আস্তে আস্তে। কারও সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে রাগ করতেন না। সহকর্মীরা তাকে সাইলেন্ট কিলার হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। সরকারের পতনের পর থেকে তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

আরবি/জেডআর

Link copied!