সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া-চকবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মন্ত্রী হয়েও চসিক প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি বিশ্ববিদ্যলয় দখল করেন। গত দুই মেয়াদে নওফেল-দীপু মনি শিক্ষা খাতকে পিছনে ঠেলে দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যত দিন ছিলেন, তত দিন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রকল্প থেকে অর্থ লোপাটের বিস্তর অভিযোগ সাবেক মন্ত্রী নওফেলের বিরুদ্ধে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুবরাজ হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পরই তার রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। দ্বাদশ সংসদে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সব শিক্ষাঙ্গনে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তার পছন্দের লোকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বসিয়ে, শিক্ষার মান নিয়ে কোনো চিন্তা না করে একের পর এক দুর্নীতির প্রকল্প গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল। বাবার রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তার অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ করছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরপরই নওফেলের ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। পরপর এমপি, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হয়ে ও বাবার দলীয় পরিচয় সূত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ নেন। তৎকালীন সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার কারণে নওফেল কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। প্রতিটি সেক্টরে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট করে লুটপাট করতেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মবহির্ভূত উপায়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ও কবজায় নেওয়া, কাড়ি কাড়ি টাকার বিনিময়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও বদলি করত নওফেল সিন্ডিকেট।
পটপরিবর্তনের পর বর্তমান সরকার নওফেলের নানা অপকর্ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং অন্যান্য গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থা। গত ২০ আগস্ট বিএফআইইউ নওফেল এবং তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত এবং ব্যাংক হিসাবের তথ্যও তলব করেছে। নওফেল ও তার স্ত্রী এমা ক্লারা বাটন এবং তাদের দুই সন্তান নীনা এমিলি ফাওজিয়া চৌধুরী ও হান্না শ্রেয়া এনী চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তাদের হিসাবের তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
অন্যদিকে নওফেলের দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী হওয়া পর্যন্ত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের আগের পাঁচ বছরে তার অর্থ-সম্পদ বেড়েছে সাত গুণ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নওফেল এক কোটি ৬১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩১ টাকার সম্পদ দেখিয়েছিলেন হলফনামায়। তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল তখন ৫৯ লাখ টাকা, যেখানে স্বামী-স্ত্রী কারও নামেই কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না। এবার নিজের নামে চার লাখ টাকার কৃষিজমি এবং এক কোটি টাকার দালান; স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দালানের তথ্য দিয়েছেন হলফনামায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় নওফেল তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ১০ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৬ টাকা, যার মধ্যে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণই ৯ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৬ টাকা। পাশাপাশি স্ত্রীর নামে এক কোটি এক লাখ ৮৯ হাজার ৪১৯ টাকার সম্পদ তিনি দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৯ টাকা।

 
                            -20241126070152.jpg) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন