বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সব সিদ্ধান্ত লন্ডন থেকেই গৃহীত হচ্ছে। বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন থেকে লন্ডনে অবস্থান এবং বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির অধিকাংশ সিদ্ধান্ত লন্ডন থেকে গৃহীত হওয়ায়, লন্ডনকেন্দ্রিক রাজনীতি বেড়ে গেছে বহুগুণ।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিও হয়ে পড়েছে লন্ডনকেন্দ্রিক। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেও তাদের রাজনীতির অধিকাংশ সিদ্ধান্ত আসত লন্ডন থেকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ১৯৮১ সাল থেকে স্থায়ীভাবে লন্ডনে বসবাস করছেন। যদিও তিনি বর্তমানে তার বোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে অবস্থান করছেন। লন্ডনে থেকে তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের একাংশের রাজনীতি।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তারেক রহমান। এক সপ্তাহ পর ১১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন তিনি। সেই থেকে তিনি দেশটিতে রয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাদের কাছে যিনি কাণ্ডারি, কর্মীদের চোখে তিনিই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। বিগত দেড় যুগ দলের মহা সংকটে লন্ডনে অবস্থান করেও বিশাল দলটিকে আগলে রেখেছেন। দেশে দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া দলের শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাতে দেশ থেকে ছুটে আসেন লন্ডনে। সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডনে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। নানা বিষয়ে আলাপের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়টিও তাদের আলোচনায় থাকছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। এই পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে লন্ডনে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকার পতনের পর এখন আওয়ামী লীগ আবারও লন্ডনকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে সংঘটিত জুলাই- আগস্ট অভ্যুত্থানের পর বলা যায়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম লন্ডন থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। দলের অধিকাংশ নেতারাই পালিয়ে এখন দেশটিতে অবস্থান করছেন। গত ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী লন্ডনে পালিয়ে এসেছেন। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন মাধ্যমে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া দলের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে থেকে দলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন। পরবর্তীতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত করে দেয়। আর তিনিই হচ্ছেন আগামীর দেশনায়ক তাই দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ এখান থেকে গৃহীত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, তথাকথিত ‘কোটা আন্দোলনের’ নেপথ্যে থেকে দেশদ্রোহী গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক মোড়লদের সহযোগিতায় মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ধ্বংসের তলানিতে নিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তি নিধন করছে। মামলা-হামলা আর হত্যায় বেপরোয়া প্রফেসর ইউনূস এবং তার দোসর, জামায়াত এবং তাদের সমর্থকদের দ্বারা অসাংবিধানিকভাবে জোরপূর্বক বাংলাদেশ রাষ্ট্র দখল করে রেখেছে। প্রাণ বাঁচাতে দলের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়েছেন। যেহেতু দেশে আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সেহেতু আমরা লন্ডন থেকে সরব হচ্ছি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং স্বাধীনতা অর্জনে প্রবাসী সরকারের ভূমিকা বাঙালি জাতির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয়। যুদ্ধের নয় মাস নিদ্রাহীন চোখে প্রবাসী বাঙালিরা স্বাধীনতার যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন সর্বস্ব নিয়ে। আবারও সময় এসেছে প্রবাস থেকে দল এবং দেশকে বাঁচাতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যুক্তরাজ্যে থেকেই আমরা আবার দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পরব। আমাদের নেত্রী ইতিমধ্যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ীই আমরা অগ্রসর হবো।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন