বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১০:০৬ পিএম

রেকর্ড পোশাক রপ্তানি কৃষি বিপ্লবের দেশে

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১০:০৬ পিএম

রেকর্ড পোশাক রপ্তানি কৃষি বিপ্লবের দেশে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বর্তমান বিশ্বে কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটাতে যেসব দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডস উল্লেখযোগ্য। ইউরোপের দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক। নেদারল্যান্ডস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের স্থান চতুর্থ।

আর দেশটি বাংলাদেশের নবম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক, যা মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাবার।

জানা যায়, নেদারল্যান্ডস দেশটির জনসংখ্যা খুব বেশি নয়, মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখের মতো। দুই দশক আগেও নিজেদের জনগণের মুখে খাবার তুলে দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগত দেশটি। অথচ আজ তারাই হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশটি আজ কৃষিপণ্য রপ্তানি করছে পুরো পৃথিবীতে। ইউরোপের অন্যতম এই দেশের আয়তনও খুব বেশি নয়, প্রায় ৪২ হাজার বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি জমিই তারা ব্যবহার করছে কৃষিকাজে। ফলে আয়তনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যের সমান হয়েও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে মার্কিনিদের পরেই অবস্থান করছে ডাচরা। কৃষি প্রযুক্তি রপ্তানিতেও শীর্ষপর্যায়ে রয়েছে তারা।

জানা যায়, আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগের সমান হলেও নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বের ১৬তম অর্থনীতি। নেদারল্যান্ডসের মতো একটি ছোট্ট দেশে ৮৫ রকমের টমেটো এবং ৫৫৫ রকমের আলু উৎপন্ন হয়। ২ হাজারের ওপরে ভিন্ন রকমের হিয়াসিন্ট ফুলের চাষ হয়। নেদারল্যান্ডস পেঁয়াজ রপ্তানি করে।

নেদারল্যান্ডসে প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে ফসলের চাষ হচ্ছে। এসব গ্রিনহাউজে সার ও পানি লাগে খুবই কম। প্রথাগত পদ্ধতিতে ১০ একর জমিতে যে ফসল ফলে, তা মাত্র এক একর গ্রিনহাউজের মধ্যেই উৎপাদন করছে নেদারল্যান্ডস। ডাচ খামারগুলো এক পাউন্ড টমেটো জন্মাতে মাত্র দেড় গ্যালন পানি ব্যবহার করে, যেখানে বিশ্বব্যাপী এর গড় ২৮ গ্যালনের বেশি। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের গ্রিনহাউজগুলো কীটনাশকের ব্যবহার বাদই দিয়েছে বলা যায়।

দেশটির অর্ধেকের বেশি জমি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। ডাচরা প্রায়ই বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ডস যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছিল, সেই শিক্ষাই তাদের খাদ্য উৎপাদনে মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করে। এই প্রচেষ্টায় দারুণ সফল নেদারল্যান্ডস। আজ বিশ্বের শীর্ষ ২০টি কৃষিখাদ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিরই বড় গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে দেশটিতে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নেসলে, কোকা-কোলা, ইউনিলিভার, কারগিল, ক্রাফট হেইঞ্জ প্রভৃতি।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস থেকে ২৫৬ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, অর্থাৎ ৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগই আসে নেদারল্যান্ডস থেকে। তাদের বিনিয়োগের অন্যতম খাত হলো জ্বালানি, চামড়া, সিমেন্ট ইত্যাদি। নেদারল্যান্ডসে মোট রপ্তানির ৮৪ থেকে ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাক। বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে নিটওয়্যার, ওভেন, গার্মেন্টস, গলদা চিংড়ি, জুতা, বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেল ইত্যাদি। আর সেই দেশ থেকে আমদানি করা হয় মূলধনি যন্ত্রপাতি, শাকসবজি, জীবিত প্রাণী (পশু ও পাখি), খনিজ দ্রব্য, ওষুধ, প্লাস্টিক, রাবার ইত্যাদি।

নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাকপণ্যের অন্যতম প্রধান ইউরোপীয় আমদানিকারক। ২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নেদারল্যান্ডস এরই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির তিন-চতুর্থাংশ বা ৭৬ শতাংশই হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ১২টি দেশে। এই দেশগুলোর প্রতিটিতে রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

সূত্রমতে, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশি টেক্সটাইল ও পোশাকের অন্যতম প্রধান ইউরোপীয় আমদানিকারক রাষ্ট্র। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ তৈরি পোশাক নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করে। নেদারল্যান্ডস ধারাবাহিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায়িক অংশীদার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ২০২৩ সালে  বাংলাদেশ থেকে ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানির মোট মূল্য ছিল প্রায় ১৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালেও নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চে ৩৩টি আর্টিকেল যুক্ত করে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ বিষয়ে নতুন চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। ফলে সেবার বিপরীতে ১০ শতাংশ কর আরোপের বিধান রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া আগের চুক্তিতে উভয় দেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদ আয় ছিল করমুক্ত। এখন শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আয়কে করমুক্ত রাখা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস ছাড়াও বিশ্বের আরও ৪২টি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। এসব দেশের বেশির ভাগই বিনিয়োগ করেছে এ দেশে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিদায়ি অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্যের শীর্ষ ১২ রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, জাপান, পোল্যান্ড, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।

নেদারল্যান্ডসের বাজারে পণ্য রপ্তানি ৭ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!