বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:২৫ এএম

আন্দোলনে অস্থির জনপ্রশাসন

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:২৫ এএম

আন্দোলনে অস্থির জনপ্রশাসন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ, কর্মবিরতিসহ নানা আন্দোলন করছেন প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তা। পাশাপাশি পদ-পদোন্নতিসহ চাকরিসংক্রান্ত নানা দাবিতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানেও রয়েছেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। আন্তঃক্যাডারের এই দ্বন্দ্বে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার ও আগের দিন সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষা ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আলাদা কর্মসূচি দিয়েছেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সব দাবি মানা না হলে ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার কর্মসূচি দিয়েছেন স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছেন এ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

এর আগে ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গত মঙ্গলবার এক ঘণ্টার কলমবিরতির মাধ্যমে প্রকাশ্যে আন্দোলন শুরু করেছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ‘পরীক্ষার মাধ্যমে’ জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং এ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ তুলে ধরেন।

এ ছাড়া ক্যাডার সার্ভিস থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন। এর পরিবর্তে জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্যের পৃথক কমিশন তৈরির প্রস্তাব করা হয়। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

মূলত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের এমন প্রস্তাবনার পর থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সংস্কার কমিশনের ওই সুপারিশের প্রতিবাদে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মকর্তারা। তবে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লে ‘সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান’ ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সংস্কার কমিশনের এমন প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বিক্ষোভের সূত্রে গতকাল সকালে রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সাল থেকে ৪১তম বিসিএস পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা যৌথ প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্লাহ।

‘জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে বিসিএস (প্রশাসন) অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা) ও বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড।

সভায় উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ হারে পদোন্নতির সম্ভাব্য সুপারিশকে ‘অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়।

বিসিএস নবম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন কালাম বলেন, শুধু সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করলেই হবে না, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এ সংস্কার কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা বলেন, বৈষম্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে আমরা এখানে এসেছি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে ৫০-৫০ বণ্টনের কথা বলা হচ্ছে তা অযৌক্তিক, প্রহসনমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক। এ সময় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার উদাহরণ তুলে ধরে সোহেল রানা বলেন, ১৯৯৮ সালে ২৫ শতাংশ উপসচিব পদে অন্যায্যভাবে অন্যান্য ক্যাডারকে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়। সেটি বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছেন, উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একমাত্র প্রশাসন ক্যাডার আইন ও প্রশাসন নামের একটি কোর্স করে। অন্য কোনো ক্যাডার তা করেনি। ১৮৫৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডার সচিবালয় চালিয়েছে। আমাদের ট্রেনিং, মেধা সব বলে উপসচিব প্রশাসন ক্যাডার পদ, তাহলে কেন শতভাগ উপসচিব পদে শতভাগ পদোন্নতি পাবে না প্রশাসন।

বৈষ্যমের অভিযোগ তুলে ২৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সাইফুল কবির বলেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে এখনই ২৫ শতাংশ কোটা আরোপিত আছে, বৈষম্যটা আরও বড় করার চেষ্টা চলছে। আমরা চাই সেই ২৫ শতাংশও যেন না থাকে।

তিনি বলেন, একই প্রশ্নে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কেউ প্রশাসন ক্যাডারে এসেছে, কেউ অন্য ক্যাডারে গিয়েছে। আমি পিএসসিকে চয়েস প্রকাশ করার দাবি জানাই, তাহলে দেখা যাবে কে কোন পদের চয়েস দিয়ে কোন পদে নিয়োগ পেয়েছে।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ৩০ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, উপসচিব পদে আসতে চায় শিক্ষা ক্যাডার। তাদের কি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ আছে? তারা ১০-১৫টা কলেজে পড়িয়েছেন। উপসচিব পদে পদোন্নতি পেলে তাদের নতুন করে সব প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ব্যাপারটা এমন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগে ভর্তি হয়ে দুই বছর পর বলছি, আমি আইন বিভাগে পড়তে চাই।

সভার সূচনা বক্তব্যে সংসদ সচিবালয়ের সচিব মো. আনোয়ার উল্লাহ জানান, সংস্কার কমিটি আজ বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। তাই তার আগে সবার মতামত ও সুপারিশ জানতে এবং কমিশনকে অবহিত করতে এ সভার আয়োজন করা হয়।

এদিকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে বাইরে রাখার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া ও উপসচিব পদে সব ক্যাডারের কর্মকর্তাকে সমান সুযোগ দেওয়াসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সব দাবি মানা না হলে ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডারবহির্ভূত করার অশুভ চেষ্টা প্রতিরোধ করে ১৫ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

একাধিক ক্যাডার কর্মকর্তা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ১৫ হাজার কর্মকর্তার শিক্ষা ক্যাডার ক্যাডার সার্ভিসে অন্যতম বড় ক্যাডার। এরই মধ্যে এই ক্যাডারের অনেক প্রশাসনিক পদে প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। এতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি গ্রেড বঞ্চনাও রয়েছে দীর্ঘদিনের। এসব সমস্যা সমাধান না করে উল্টো শিক্ষা ক্যাডারকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা শুভ নয়।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখার জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করতে যাচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব নীতিনির্ধারণী পদে স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তা পদায়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিসিএস হেলথ ক্যাডার আয়োজিত ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্তিসংক্রান্ত সুপারিশ প্রত্যাখ্যান ও উপসচিব পদে সব ধরনের কোটা’ বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন চিকিৎসকেরা।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব উম্মে তানিয়া নাসরিন বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে, ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এ ধরনের একতরফা সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে।

ডা. তানিয়া বলেন, স্বাস্থ্য ক্যাডারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও জনগণের প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ডা. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করে জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশনের মতো পৃথক কমিশন করা হলে কি সমস্যা হবে জানতে চাইলে চিকিৎসকেরা বলেন, আলাদা কমিশন করা হলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নীতিমালা কীভাবে হবে, কমিশন স্বাধীনভাবে কীভাবে চলবে সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।

প্রশাসন সংস্কার কমিশন শুধু জনপ্রশাসন সংস্কার করুক। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্যের সংস্কার করুক। যদি স্বাস্থ্যে ক্যাডার সার্ভিস বাদ দিতে হয় তাহলে দেশে কোনো ক্যাডার সার্ভিস থাকবে না।

আরবি/জেডআর

Link copied!