পুঁজিবাজারে ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলে ২৮টি ব্যাংকের কোনো অংশগ্রহণ নেই। আর যে ৩৮টি ব্যাংক এই তহবিলে অংশ নিয়েছে সেসব ব্যাংক তহবিলের মাত্র ৫০ শতাংশের কিছু বেশি অর্থ বিনিয়োগ করলেও প্রায় ৫০ শতাংশ তহবিল বিনিয়োগ করতে পারেনি।
এ অবস্থায় টালমাটাল পুঁজিবাজার চাঙ্গা রাখতে এর মেয়াদ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগের জন্য গঠিত ৬ হাজার ৯৬ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের আকার ও সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিলের ৫০ শতাংশের কাছাকাছি এখনো বিনিয়োগ না হওয়ায় এই নিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে আকার ও সময়সীমা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে তপশিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গঠিত বিশেষ তহবিলের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর-২০২৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ তহবিলের মেয়াদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, বিশেষ সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১টি তপশিলি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৩৮টি ব্যাংক এ তহবিলের আওতায় মোট ৬ হাজার ৯৬.১৩ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ পরিমাণ মাত্র ৩ হাজার ৬৭৪.৬৩ কোটি টাকা। ফলে, বিপুল পরিমাণ তহবিল অব্যবহৃত রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, বিশেষ তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যৌক্তিক নয়। তবে এ তহবিলের মেয়াদপূর্তিতে বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলো বিশাল অংকের এ বিনিয়োগ উত্তোলন করলে পুঁজিবাজারে বিক্রয় চাপজনিত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আবার বিনিয়োগকৃত অধিকাংশ সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য ক্রয় মূল্য থেকে কম হওয়ায় বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে অবিক্রিত সিকিউরিটিজের বিপরীতে অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। তাই, আর্থিক খাতের সার্বিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে গভর্নরের অনুমোদনে বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিলকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখা হয়।
ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পেয়ে আসছে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর বিশেষ এই তহবিলের সময়সীমা শেষ হয় ৯ ফেব্রুয়ারি। এ অবস্থায় বিশেষ এই তহবিলের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি তহবিলের আকার বাড়ানোর দাবি জানায় ডিবিএ।
গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিশেষ এই তহবিল সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত ও তহবিলের আকার ২০০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার দাবি জানান।
চিঠিতে ডিবিএর সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের শেষভাগ থেকে বাজারে দীর্ঘ মন্দা বিরাজ করছে। যার ফলে বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। দীর্ঘ এই মন্দা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার মধ্যস্থতাকারী, স্টক-ব্রোকার, সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ ২০ লাখের বেশি বিনিয়োগকারীকে প্রভাবিত করেছে।
এ অবস্থায় বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির মুখে রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে বিশেষ এই তহবিল যদি বন্ধ হয়ে যেত প্রাতিষ্ঠানিক অনেক পোর্টফোলিও বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্ষতি হতো। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ত বাজারে। তাই বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় তহবিলের মেয়াদ ও আকার বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল। যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পরিচালক আ.ন.ম. মঈনুল কবীর চিঠিতে বলেছেন, ‘মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য এ তহবিলের আওতায় বিনিয়োগকে বর্ধিত মেয়াদ পর্যন্ত ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২৬ক ধারায় নির্দেশিত পুঁজিবাজারে ব্যাংকসমূহের বিনিয়োগের নির্ধারিত সীমা (বিবেচ্য মূলধন উপাদানের সমষ্টির ২৫%)সহ অন্যান্য শর্তাবলি এবং একই আইনের ৩৮ ধারার প্রথম তপশিলের অধীন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনার ৪ (খ) ক্রমিকে বর্ণিত বছর শেষে পুনঃমূল্যায়নের বাধ্যবাধকতার আওতামুক্ত রাখা অপরিহার্য।’
এ অবস্থায়, ‘ডিওএস সার্কুলার নং-০১/২০২০ এর আওতায় বিশেষ তহবিলের বর্তমান মেয়াদপূর্তির সময় হতে বর্ধিত মেয়াদ (৩১ ডিসেম্বর ২০২৬) পর্যন্ত ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২৬ক ধারা এবং একই আইনের ৩৮ ধারার প্রথম তপশিলের অধীন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনার ৪(খ) ক্রমিকের আওতাবহির্ভূত রাখার বিষয়ে একই আইনের ১২১ ধারার আওতায় জরুরিভিত্তিতে আপনাদের সদয় সম্মতি কাম্য।’

 
                            -20250304185854.webp) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন