রাজনীতির মাঠে এখন সবচেয়ে বড় আলোচনা- কবে হবে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় সেই মাঠ এখন বিএনপি ও জামায়াতের দখলে। তবে রাজনীতির মাঠে নতুন চ্যালেঞ্জের নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি।
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বারবার বলে আসছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, চলতি বছর নির্বাচন করা কঠিন হবে।
এতদিন ডিসেম্বের নির্বাচনের ইঙ্গিত দিলেও এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বললেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন।
একই দিনে এনসিপির প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার এমন মন্তব্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত দলটিকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে, তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় বলেও জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও সদ্য সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জননিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এ বছর সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।
গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘গত সাত মাসে আমরা সবাই আশা করেছিলাম রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আইন ও শাসন স্বল্পকালীন সংস্কারের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। এটি একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, তাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে আমি মনে করি না।’
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা কেন কঠিন, জানতে চেয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘এখনো ৯-১০ মাস সময় আছে। নির্বাচন কমিশন যদি চায়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। কারণ, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার সহায়তা করবে।’
রিজভী বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে। ভাই, আমরা তো এটা বুঝতে পারছি না। গণপরিষদ করতে হয় এই কারণে তার মাধ্যমে একটা সংবিধান রচনা করা হয়। আমাদের তো সংবিধান আছে।
শেখ হাসিনা সংবিধানে অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদী আইনকানুন যুক্ত করেছেন। কিন্তু এটা তো সংশোধনের বিধান আছে। অনেকবার সংশোধন হয়েছে। তো গণপরিষদ আসছে কেন? এই কথাগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করছে।’ নতুন রাজনৈতিক দলের এমন আচরণকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা চাই ঈদের আগেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবে সরকার। আর যদি তা না করে, তবে ঈদের পর গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা বসে ঠিক করব আমাদের কী করা উচিত।
নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করা ঠিক হবে না। নির্বাচিত সরকার না থাকলে রাজনৈতিক সংকট কাটবে না। কেন তারা সময় নিতে চায়, সেটা আমাদের বুঝে আসে না। তারা কি নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়? তাদের কী লাভ তাতে? নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে দল গোছানোর সময় দিতে চায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সেটা ঠিক হবে না অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য।
এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসে নির্বাচন করতে পারলে তাদের সমস্যা কোথায়? আমি আগেই বলেছি, জুন-জুলাই মাসের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব, যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে। সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচন করবে বলেছে, আমরা তার কথায় আস্থা রাখতে চাই। কে কী বলল, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই সরকার একটি দুর্বল সরকার। তাদের পক্ষে দেশ পারিচালনা কঠিন কাজ। যার কারণে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
মব তৈরি হচ্ছে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে দেওয়া উচিত। তাতে করে তাদেরও মঙ্গল হবে। দেশের মানুষেরও মঙ্গল হবে। নির্বাচন দিতে যত বিলম্ব করবে, ততই দুর্ভোগ বাড়বে মানুষের। পতিত ফ্যাসিবাদ শক্তি সঞ্চয় করে দুর্বৃত্তায়ন করবে। এনজিও পরিচালনা আর রাষ্ট্র পরিচালনা এক কাজ নয়।
তারা তো সবকিছুতে এনজিও স্ট্যাইনে পরিচালনা করতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরে নির্বাচনে না দিলে আমরা তো আর বসে থাকব না, আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব কীভাবে নির্বাচন আদায় করা যায়।’ সদ্য সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ বছর নির্বাচন কঠিন হবে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তার জবাবে বলেন, ‘সে তো এখন সরকারে নেই, তবে সে বলে কী করে এ বছর নির্বাচন সম্ভব নয়? নির্বাচন তো করবে নির্বাচন কমিশন।
 কমিশন বলুক ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব কি না। এখনো তো অনেক সময় বাকি ডিসেম্বর আসতে।’ রাজনীতির সরল অঙ্কের গরল ফলাফল এখনেই মেলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতারা।
 

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন