লন্ডনের দ্য ওভালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টেস্টের শেষ দিনের সকালে মোহাম্মদ সিরাজের অসাধারণ বোলিংয়ে ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় জয় ছিনিয়ে এনেছে। এই জয়ের ফলে সিরিজে সমতা এনেছে শুবমান গিল-এর দল।
যে ডেলিভারিতে ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান গাস অ্যাটকিনসনের অফ-স্টাম্প ছত্রখান হয়ে যায়, তার গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটার। এই ডেলিভারিটিই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের অন্যতম স্মরণীয় জয় নিশ্চিত করে।
ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে সিরাজের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে ‘অ্যাংরি ম্যান’ হিসেবে পরিচিত এই ফাস্ট বোলার তখন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ।
পঞ্চম টেস্টে তার শিকার ছিল ৯ উইকেট, যার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে একাই ৫টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে তিনি তার সতীর্থদের চেয়ে ৫ লক্ষ রুপি বেশি পুরস্কার পাবেন।
সিরাজের এই অবিশ্বাস্য সাফল্য এসেছে তার নিরলস পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং কঠিন মানসিকতার ফলস্বরূপ। আজ থেকে এক দশক আগে হায়দরাবাদের একটি করপোরেট দলের হয়ে ম্যাচপ্রতি মাত্র ২০০ রুপিতে খেলতেন তিনি।
সে সময়ে তার প্রয়াত বাবা মোহাম্মদ গাউসের কাছে ছেলেকে একটি ভালো কেডস কিনে দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে সিরাজ বাবার কবরে গিয়ে দোয়া করেছেন।
অন্যদিকে, ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তার মা শাবানা বেগম।
শাবানা বেগম ভারতের সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার আবদুল আজিমের বোনের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি প্রায় প্রতিদিন আজিমের কাছে তার ছেলেকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করতেন।
তিনি বলতেন, ‘সাহেব, আমার ছেলেকে একটু সাহায্য করুন। পড়ালেখায় ওর মন নেই। সারা দিন শুধু ক্রিকেট খেলে।’ অবশেষে আজিম সিরাজকে একটি ক্লাবে সুযোগ করে দেন, যেখান থেকে হায়দরাবাদ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ট্রায়ালে নির্বাচকদের নজর কাড়েন সিরাজ। তার এই অদম্য মানসিকতাই তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।
সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সিরিজে ৫টি টেস্টে মোট ২৩টি উইকেট নিয়ে সিরাজ কোটি কোটি ভারতীয়র নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন। ক্রিকেট বিশ্ব এখন তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটার জো রুটও সিরাজকে ‘একজন যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। এই সিরিজে ১৮৭ ওভারেরও বেশি বোলিং করেছেন সিরাজ।
তিনি সেই উপজাতির বংশধর, যারা একসময় হায়দরাবাদের শাসক নিজামদের দেহরক্ষী ছিলেন। তার ধমনীতে সেই যোদ্ধার রক্তই বইছে।
আপনার মতামত লিখুন :