লন্ডনের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। ২০০৫ সালের সেই সকালে লর্ডসের পোশাকি নীরবতা ভেঙে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল এক কিশোর— চোখে স্বপ্ন, মনে ভয়, আর বুকভরা উত্তেজনা। বয়স তখন মাত্র সাড়ে ১৬। নাম— মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের ইতিহাসে তখন টেস্ট ক্রিকেট ছিল নতুন, শৈশবের মতোই অনভিজ্ঞ। আর সেই অনভিজ্ঞতার ভীড়ে দাঁড়িয়েই অভিষেক হলো ছোটখাটো গড়নের, কিন্তু কণ্ঠে অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা নিয়ে আসা সেই ছেলেটির।
সেদিন হয়তো কেউ ভাবেনি, লর্ডসের সেই গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কিশোর একদিন দেশের ক্রিকেটকে নিজের কাঁধে নিয়ে টেনে তুলবে বারবার। স্বপ্নটাকে এতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে যে, দুই দশক পরে তার নাম লেখা হবে রেকর্ডের পাতায়—ইতিহাসের খুব কাছে।
সময়ের হিসাব পাল্টেছে, বয়স বাড়েছে, কিন্তু মুশফিকের যুদ্ধজয়ী মনোভাব বদলায়নি একটুও। লর্ডসে শুরু হওয়া পথচলা এসে দাঁড়িয়েছে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ গ্যালারির সামনে। সেই মিরপুর—যেখানে তার ব্যাটে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য মহাকাব্য; যেখানেই মুশফিক হলো সবচেয়ে পরিণত, সবচেয়ে দায়িত্বশীল, সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য।
এবং সেই মিরপুরেই—আগামী ১৯ নভেম্বর—তিনি খেলবেন তার শততম টেস্ট। শুধু একটি ম্যাচ নয়, একটি যুগের প্রতিচ্ছবি। দেশের ক্রিকেটে টেস্ট সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা আর অগাধ ধৈর্যের প্রতীক।
কত গল্প, কত ঝড়ঝাপটা, কত সমালোচনা, কত রাত জাগা অনুশীলন—সব মিলিয়ে যেসব চরিত্রই কিংবদন্তি হয়ে ওঠে, তারই মতো করে গড়ে তুলেছেন নিজের পরিচয়। বলাই যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটে “মি: ডিপেন্ডেবল” টাইটেলটা ঠিকঠাক জায়গাতেই পড়েছে।
লর্ডসে অভিষেক আর মিরপুরে মাইলফলক—দুই প্রান্তে দুই ভুবন। একদিকে বিস্ময় চোখে দেখা একটি স্বপ্নের সূচনা, আরেকদিকে পরিপূর্ণতার শিখরে দাঁড়ানো অবিশ্বাস্য এক অধ্যায়। এই যাত্রাপথ আসলে শুধু একজন ব্যাটসম্যানের নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বেড়ে ওঠার গল্পও।
যেখানে এক কিশোরের লর্ডসের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা শুরু, সেখানেই আগামী বুধবার ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন তিনি—নিজ দেশের ক্রিকেটকে গর্বে ভরিয়ে। মিরপুরে আলো জ্বলে উঠবে, গ্যালারি গর্জে উঠবে, আর মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একজন মুশফিকুর রহিম বুঝবেন—একজন মানুষের অধ্যবসায় কীভাবে একটি জাতির ক্রিকেট-স্বপ্নকে বুকে ধরে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ব্যাট হাতে মুশফিক দুই দশকের ক্যারিয়ারে ১১টি সেঞ্চুরি, ২৭টি ফিফটি এবং ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। মোট রান ৬,৩২৮ এবং ব্যাটিং গড় ৩৮.১২, যা তাকে দেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

