২৪ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্পেনের শীর্ষ ফুটবল লিগ লা লিগা-তে ফিরে এসেছে রিয়াল ওভিয়েদো। গত রবিবার কার্লোস তার্তিয়েরে স্টেডিয়ামে তাদের এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে পুরো শহর যেন উৎসবের রঙে সেজেছিল।
এটি শুধু একটি ফুটবল ম্যাচ ছিল না, ছিল একটি ক্লাব এবং তার ভক্তদের দীর্ঘ লড়াই, সংহতি ও ঘুরে দাঁড়ানোর এক মহাকাব্যিক গল্প।
ম্যাচের শুরুতেই স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল আবেগ আর উচ্ছ্বাসের এক নীল সাগরে। মাঠের উত্তর দিকে ভক্তরা উন্মোচন করেছিল ১,৮০০ বর্গমিটারের বিশাল পতাকা, যা তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার প্রতীক।
এদিকে, শহরের ব্যাগপাইপাররা জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে মুহূর্তটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলল। সম্মানসূচক কিক-অফ করতে মাঠে নেমেছিল ২০০১ সালে জন্ম নেওয়া দুই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি—এলেনা ও কার্লোস। তাদের মাধ্যমে যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
পতনের পর ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম
রিয়াল ওভিয়েদোর এই পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। ২০০১ সালের ১০ জুন রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে লা লিগায় সর্বশেষ ম্যাচ খেলার পর থেকেই ক্লাবটি চরম সংকটের মুখে পড়ে।
২০০৩ সালে ক্লাবটি নিম্ন ডিভিশনে নেমে যায় এবং ৭০ কোটি পেসেতার বিশাল ঋণের বোঝা তাদের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
ঠিক তখনই, ক্লাবের প্রাণভোমরা ‘ভক্তরা’ সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। তারা শুধু মাঠের দর্শক হয়ে থাকেনি, বরং নিজেদের হাতে ক্লাবের হাল ধরেছিল। তারা নিজেরাই মাঠের ঘাস কেটেছে, স্ট্যান্ডগুলো নতুন করে রং করেছে, সদস্যপদ বাড়ানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
এই অসামান্য ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতির জোরেই ক্লাবটি ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায় এবং ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত হতে থাকে।
ফলাফল নয়, আবেগের জয়
এই প্রত্যাবর্তন ম্যাচটি ছিল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। যদিও ওভিয়েডো ৩-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল সেদিন একেবারেই গৌণ ছিল। পুরো স্টেডিয়ামের সবার কাছে এটি ছিল এক প্রতীকী বিজয়।
রিয়াল মাদ্রিদের কোচ সেই আবেগঘন পরিবেশ দেখে অভিভূত হয়েছেন। জাবি আলোনসো স্বীকার করেছেন, আমি জানি এই মুহূর্তটি তাদের জন্য কতটা বিশেষ। ভিন্নতা সত্ত্বেও এটি একটি আবেগঘন দৃশ্য।
ম্যাচ শেষে ওভিয়েদোর গোলকিপার আরন এসকানডেল্লও ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ।’ এটি ছিল কেবল একটি শব্দ নয়, এটি ছিল ক্লাবের পুনর্জন্মের পেছনে থাকা সমস্ত মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের এক সরল অভিব্যক্তি।